কচু শাকের পুষ্টিগুন এবং উপকারিতা
পরিচিতিঃ কচু শাক
কচু শাক হচ্ছে সেই শাক গুলির মধ্যে অন্যতম, যেগুলি পুষ্টিগুনে ভরপুর।বর্তমানে চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা যে সুষম খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে বলেন, সেখানে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের মতো প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সবুজ শাক-সবজি রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। কচু শাককে ইংরেজিতে Colocasia leaves, arum spinach ইত্যাদি নামে পরিচিত। কচু শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculenta.
কচু শাক মূলত এক ধরনের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। আজকে আমাদের পোস্টের
আলোচ্য বিষয় কচু শাকের উপকারিতা নিয়ে। আশা করি এ বিষয়ে জানতে আমাদের সাথেই থাকবেন এবং
পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
কচু শাকের পুষ্টিগুন
কচু শাক পুষ্টি গুনে ভরপুর। কচুশাকে রয়েছে - ভিটামিন-এ, বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন,
রিবোফ্লেভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন-বি৬, ফোলেট, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে,
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, জিংক এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদান। এজন্য কচু শাককে "পুষ্টির আধার" বলা
হয়।
কচু শাকের উপকারিতা
১. রক্তাল্পতা কমায়ঃ কচু শাক আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। আয়রন দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। তাই কচু শাক
রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য অবশ্য গ্রহণীয় একটি খাবার। নিয়মিত কচু শাক খেলে
রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও বেড়ে যায়।কারণ এতে বিদ্যমান আয়রন ও ফোলেট রক্তের
পরিমাণ বাড়ায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে।
২.রক্তক্ষরণ বন্ধ করেঃ কচু শাকে বিদ্যমান ভিটামিন-কে রক্তপাত প্রতিরোধ করে। তাই যাদের কাটলে রক্তপাত বন্ধ
হয়না তাদের জন্য কচু শাক ভীষণ উপকারি।
আরও পড়ুনঃ
কাঁচা মরিচ এর উপকারিতা
৩.হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করেঃ কচু
শাকের
সবচেয়ে
উপকারি
দিক
হচ্ছে,
এটি
হাড়
ও
দাঁত
গঠনে
সাহায্য
করে৷ কচু শাকে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,
আয়রন,
ম্যাঙ্গানিজ এবং
ম্যাগনেসিয়াম দাঁত
ও
হাড়
ভালো
রাখার
পাশাপাশি এগুলোর ক্ষয় হওয়া প্রতিরোধ
করে।
তাই
হাড়ের
ক্ষয়রোগে
ভোগা
রোগীদের
ডায়েটে
নিয়মিত
কচু
শাক
রাখা
উচিত।
৪.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকলেও
শর্করা আছে অতি অল্প পরিমানে, ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য একটি আদর্শ
খাবার।
৫.কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়ঃ কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ
থাকায়, তা পেট পরিস্কার রাখতে সহায়তা করে। সেই সাথে কচু শাকে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমে সহায়ক।
আরও পড়ুনঃ
আলুবোখারা । ব্যাবহার ও উপকারিতা
৬. উচ্চ-রক্তচাপের উপশমেঃ উচ্চ
রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে
রাখার
জন্য
কচু
শাকের
তুলনা
নেই।
এতে
আছে
ফ্ল্যাভোনয়েডস,
স্যাপোনিনস, ্ট্যানিনস
নামক
উপাদান।
এই
উপাদানগুলো
হুট
করে
রক্তচাপ
বাড়তে
বা
কমতে
দেয়
না।
৭.হৃদরোগের নিয়ন্ত্রনেঃ কচু শাকে বিদ্যমান ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানসমূহ রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল
জমতে দেয় না। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কচু শাকে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনঃ
গাজর খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
৯.গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারিঃ গর্ভাবস্থায় নারীদের প্রয়োজন হয়
অতিরিক্ত আয়রন এবং ভিটামিনের। আর এসবের অত্যন্ত ভালো একটি উৎস হচ্ছে কচু শাক।
কচু শাক খেলে একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের ভিটামিন, আয়রন এবং খনিজ উপাদানের চাহিদা অনেকাংশেই
পুরন সম্ভব।
১০.প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায়ঃ কচু শাকে থাকা এন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি-মাইক্রবিয়াল উপাদান শরীরের যেকোন
প্রদাহ এবং জ্বালাপোড়া কমায়।
১১. ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়ঃ কচু শাকের ভিটামিন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্রি-র্যাডিকেলস এর পরিমান কমায় যা ক্যান্সারের অন্যতম কারন।
১২. ভিটামিনের যোগান দেয়ঃ কচু শাকে শরীরের জন্য প্রয়োজনিয় প্রায় সবধরনের
ভিটামিন বিদ্যমান । ফলে কচু শাক খেলে শরীরে ভিটামিনের যোগান স্বাভাবিক থাকে।
কচু শাক আহারে সতর্কতা
কচু শাক অত্যন্ত উপকারি তাতে কোন সন্দেহ নেই তবে কচু শাকে বিদ্যমান অক্সালেট কারও
কারও জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সঠিকভাবে ধোয়া এবং রান্না করা না হলে
অক্সালেট এর ফলে গলা চুলকাতে পারে। এছাড়া আগে থেকে অক্সালেট এ এলার্জি
থাকলে কচু শাক খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আরও খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার
জন্য সংগৃহিত কচু শাক পরিস্কার জায়গা থেকে চাষ/সংগ্রহ করা হয়।
শেষ কথাঃ কচু শাকের পুষ্টিগুন এবং উপকারিতা
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো কচু শাকের পুষ্টিগুন এবং উপকারিতা নিয়ে।আমাদের আর্টিকেল যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url