কলমি শাক খাবার নিয়ম ও উপকারিতা

পরিচিতিঃ কলমি শাক 

সস্তা,সহজলভ্য কিন্তু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাদ্যের নাম কলমি শাক। কলমি শাক এক প্রকারের অর্ধ-জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় উদ্ভিদ এর পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea aquatica. ইংরেজিতে কলমি শাক  Water Spinachriver spinachwater morning glorywater convolvulusChinese spinachSwamp cabbage নামে পরিচিত।

 কলমি শাক পানির কিনারে বা ভেজা মাটিতে জন্মে থাকে। এর ডাঁটাগুলো - মিটার বা আরো বেশি দীর্ঘ হয়। ডাঁটার গিঁট বা পর্ব থেকে শেকড় বের হয়। এটি ফাঁপা বলে পানির উপরে ভেসে থাকতে পারে। কলমি শাকের পাতা অনেকটা লম্বাটে, ত্রিকোণাকার বা বল্লম আকৃতির।

কলমি শাক খাবার নিয়ম

আমাদের দেশে কলমি শাক মূলত ভাজি অথবা ঝোল রান্না করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়। এছাড়া এই শাক দিয়ে পাকোড়া, বড়া ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। আবার কলমি শাক ভর্তা করেও খাওয়া যায়।

কলমি শাকের উপকারিতা

কলমি শাক অত্যন্ত উপকারি একটি খাবার। এটি পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম,ফসফরাস, থায়ামিন, সোডীয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি ইত্যাদি।  নিচে কলমি শাক এর উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ
১.লিভার বা যকৃতের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কলমি শাকে থাকা কিছু উপাদান লিভার বা যকৃতের বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সহায়তা করে।
২.হাড় শক্ত করেঃ কলমি শাকে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের গঠন উন্নত করে এবং হাড়কে শক্ত করে।
৩.ভিটামিন-সিঃ কলমি শাকে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ করে এবং ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
৪.ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ কলমি শাকে থাকা প্রচুর পরিমানে এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি-র‍্যাডিকেলস কমিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫.হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন। এটি ধমনিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৬. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ঠিক রাখেঃ কলমি শাকে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। আয়রন হচ্ছে হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান। ফলে নিয়মিত কলমি শাক খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ঠিক থাকে।
৭.মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করেঃ জন্মের পর কোন শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ না পায় তবে সেই মাকে কলমি শাক অথবা কলমি শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেতে দিলে এতে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে।
৮. দুর্বলতা দূর করেঃ কলমি শাকে প্রচুর পরিমানে খাদ্যশক্তি থাকায় তা অসুস্থতা জনিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য বিশেষ করে উপকারি। 
৯. মাথাব্যাথা দূর করেঃ যাদের বিনা কারনে মাথাব্যাথা করে তাদের জন্য কলমি শাক বিশেষ উপকারি।
১০. অনিদ্রা দূর করেঃ কলমি শাকে বিদ্যমান বিভিন্ন  মাথা ঠান্ডা করে এবং সুনিদ্রা আনয়ন করে।
১১. বসন্ত রোগ দূর করেঃ অনেকের মতে, কলমি শাক বসন্ত রোগ দূর করে। তবে  এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য প্রমান নেই, এবং এটি অধিকতর গবেষণার দাবি রাখে। 
১২. ফোঁড়ার চিকিৎসায়ঃ শরীরে ফোড়া হলে  কলমি শাকের পাতা একটু আদার সাথে পাটায় বেটে ফোড়ার চারপাশে লেপে দিয়ে মাঝখানের জায়গা খালি রাখতে হবে। তিন দিন এইভাবে লেপে দিলে ফোড়া গলে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে ফোড়া শুকিয়ে যাবে।
১৩. বিষাক্ত পোকার কামড়ের উপশমেঃ পিঁপড়া, বিছা বা বিষাক্ত কোন পোকা-মাকড় কামড়ালে এই কলমি শাকের পাতা ডগাসহ বেটে বা পিষে রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।
১৪. আমাশয়ের উপশমেঃ আমাশয় হলে কলমি শাকের পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল নিয়মিত খেলে আমাশয়ের উপশম হয়।
১৫.গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ শিশুর উপকারেঃ কলমি শাকে প্রচুর পরিমানে ফলিক অ্যাসিড থাকে, যা  গর্ভবতী মা শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য  উপকারি ফলিক অ্যাসিড সাধারণত শিশুর মস্তিষ্ক উন্নতির জন্য প্রয়োজন। তাই কলমি শাক গর্ভাবস্থায় ্মা ও শিশু উভয়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী
১৬. ঋতুস্রাবের সমস্যা দুরিকরনেঃ মহিলাদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় সমস্যায় দ্রুত কাজ করে কলমি শাক। ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে কলমি শাক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
১৭. গর্ভাবস্থার সমস্যা সমাধানেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক গর্ভবতী মায়েদের শরীরে, হাতে-পায়ে পানি আসে বা ফুলে যায়। সেই সময় কলমি শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে নিয়মিত খেলে পানি কমে যায়।
১৮. জ্বালা-যন্ত্রনার উপশমেঃ প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা করলে কলমি শাকের রস করে ৩ বা ৪ চা-চামচ পরিমাণ ৩ সপ্তাহ খেলে ওই জ্বালা কমে যায়। আর হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

কলমি শাক খাবার সাবধানতা

কলমি শাক অত্যন্ত উপকারি তাতে সন্দেহ নেই তবে অন্যান্য খাবারের মতই এটি গ্রহনেও সাবধান থাকা উচিৎ।  বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, হজম শক্তি দুর্বল, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা, গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের কলমি শাক খাওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুনঃ লাল শাকের উপকারিতা

আবার কলমি শাক সহ যে কোনও শাক-সবজিরই পুরো উপকারিতা পেতে হলে তা সঠিকভাবে রান্না করতে হবে। অধিক তাপে বা বেশি সময় ধরে রান্না করলে এর পুষ্টিগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর শাক রান্না করার সময় তা অল্প তেল সহযোগে রান্না করলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।

শেষ কথাঃ  কলমি শাক খাবার নিয়ম ও উপকারিতা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিলো কলমি শাক খাবার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে।আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমে। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪