আল আকসা মসজিদ

পরিচিতিঃ আল আকসা মসজিদ

  আল আকসা  ( আরবিতে ٱلْـمَـسْـجِـد الْاَقْـصَى‎) ইসলাম ধর্মের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। আল আকসা মসজিদ এটি এমন একটি স্থান যা মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান এই তিন ধর্মের অনুসারিদের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় আল আকসা মসজিদ এবং এর অবস্থান, নামকরন এবং গুরুত্ব নিয়ে ।

al-aqsa

আল আকসা মসজিদ, বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত। আশা করি এগুলো জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহাকারে পড়বেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে চলে যাই মূল পোস্টে।

আল আকসা মসজিদ এর অবস্থান

বর্তমানে ইসরাইলে অবস্থিত জেরুজালেম শহরের ওল্ড সিটি বা পুরনো অংশের একেবারে কেন্দ্রস্থলে, একটি পাহাড়ের চুড়ায় ১৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে অবস্থিত আল -আকসা মসজিদ । 

আল আকসা মসজিদের নামকরণ

আল আকসা মসজিদ বা মসজিদুল আকসা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে  "দূরবর্তী মসজিদ"। এটি নবী ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। কাবা ঘরের পুনঃনির্মানের ৪০ বছর পর এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথমে  এর নাম ছিলো বায়তুল মুকাদ্দাস। মসজিদে হারাম থেকে দূরে হওয়ায় একে তিনি মসজিদুল আকসা বা দূরবর্তি মসজিদ বলে সম্বোধন করতেন। এভাবেই  এর নামকরন হয়েছে মসজিদুল আকসা বা আল আকসা মসজিদ।

আল আকসা মসজিদের বিবরণ

বাইতুল মুকাদ্দাস বা আল আকসা মসজিদ একক কোন মসজিদ বা স্থাপনা নয়। বরং বেশ কয়েকটি মসজিদ ও স্থাপনার সমন্বয়। আল আকসা মসজিদের কম্পাউন্ডে প্রায় দুই শতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ, বুরাক মসজিদ এবং ডোম অফ রক বা আল-কুব্বাতুস সাখরা( এটি টেম্পল মাউন্ট নামেও পরিচিত)। এর মধ্যে সোনালি গম্বুজ বিশিষ্ট ডোম অফ রককেই অনেকে আল আকসা মসজিদ মনে করেন বা মিডিয়াতে প্রচারিত হয়, যা আসলে সঠিক নয়। এর পশ্চিম দিকে ইহুদিদের একটি প্রাচিন মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ রয়েছে যা Western wall বা Wailing wall নামেও পরিচিত। এটি  ইহুদিদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা এবং তীর্থস্থান।

আল আকসা মসজিদের ইতিহাস

নবী ইব্রাহিম (আঃ)  আল আকসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । নবী ইব্রাহিম (আঃকাবা পুনঃনির্মাণের চল্লিশ বছর পর (খ্রিষ্টপূর্ব ২১৭০) আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। তার পুত্র ইসহাক (আঃ) এখানে ইবাদত করতেন, পরবর্তীতে ইসহাক (আঃ) এর দ্বিতীয় পুত্র ইয়াকুব (আঃআল আকসা মসজিদকে বর্ধিত করেছিলেন
আরও পড়ুনঃ
১০০৪ খ্রিস্টাব্দে  সুলায়মান (আঃ) এই ইবাদতের স্থানটির স্থাপত্য সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন মুসলমানরা বিশ্বাস করেন এই কাজে তিনি জ্বীনদেরকে নিয়োগ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা "গলিত তামার ঝরণা" প্রবাহিত করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ
নবী সুলাইমান (আঃ) নির্মিত  ইবাদতের স্থানটি পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আঃ) সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহর উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ

খলিফা উমর (রা:) বর্তমান মসজিদের স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে মসজিদটি পুনর্নির্মিত সম্প্রসারিত হয়। এই সংস্কারকাজ ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে শেষ হয়।

৭৪৬ সালে ভূমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফাতেমীয় খলিফা আলি আজ-জাহির পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করেন যা বর্তমান অবধি টিকে রয়েছে।

১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্রসেডাররা জেরুজালেম দখল করার পর তারা আল আকসা মসজিদকে একটি প্রাসাদ এবং একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত "কুব্বাত আস সাখরা" বা "টেম্পল মাউন্ট" কে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করত।

১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম পুনরায় জয় করার পর পুনরায় মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার  শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ

এরপর আইয়ুবী, মামলুক, উসমানীয়, সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল জর্ডানের তত্ত্বাবধানে আল আকসা মসজিদের নানাবিধ সংস্কার করা হয়। বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদটিতে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙ্গিনা, মিম্বর, মিহরাব সহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ কাঠামো।

আরও পড়ুনঃ

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইস্রায়েলি যুদ্ধের পর বর্তমানে পুরনো জেরুজালেম শহর বা ওল্ড সিটি ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আল আকসা মসজিদটি জর্ডানি/ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন ইসলামি ওয়াকফের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

আল আকসা মসজিদের ধর্মীয় গুরুত্ব

১. প্রথম কিবলাঃ আল আকসা মসজিদ মুসলিমদের প্রথম কিবলা বা প্রার্থনার দিক হিজরতের পর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে কাবা নতুন কিবলা হয়।
২. মিরাজের স্থানঃ আল আকসা মসজিদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মিরাজের স্থান হিসেবে মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিরাজ বা ঊর্ধাকাশে গমন এবং আল্লাহপাকের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাক্ষাৎ ইসলামের অত্যন্ত মাহাত্যপূর্ণ একটি ঘটনা। মিরাজের রাতে মক্কা থেকে থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস বা আল আকসা মসজিদে আসেন এবং এখান থেকে ঊর্ধাকাশে গমন করেন এবং আল্লাহপাকের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাক্ষাৎ শেষে এখানেই অবতরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ
মিরাজ বা ঊর্ধাকাশে গমন এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইসলামের  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ৫ ওয়াক্ত সালাত/নামাজ এবং অন্যান্য বিধানাবলি মানব জাতির জন্য আল্লাহর তরফ থেকে উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন।
৩. ধর্মীয় মর্যাদাঃ আল আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন "একজন ব্যাক্তি ঘরে নামাজ পড়লে যে নেকি পাবেন, ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে তার ২৫ গুন, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুন, মসজিদুল আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুন, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুন এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুন সওয়াব পাবেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত) ।
আরও পড়ুনঃ 
ধর্মীয় কারনে তথা সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে যে কয়টি মসজিদে বা স্থানে ভ্রমনের কথা কুরআন এবং হাদিসে বলা হয়েছে তার মধ্যে আল আকসা মসজিদ অন্যতম। 

শেষ কথাঃ আল আকসা মসজিদ

আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় ছিলো আল আকসা মসজিদ নিয়ে । আশা করি আমাদের এই পোস্ট পড়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর আপনাদের মূল্যবান মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে।


 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪