টাংগুয়ার হাওর । কোথায় অবস্থিত, কেন বিখ্যাত
পরিচিতিঃ টাংগুয়ার হাওড়
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এলাকা এদেশের হাওড়, বাওড়, বিল, ঝিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাওড় গুলো যেমন সৌন্দর্যে অদ্বিতীয় তেমনি সেগুলো সম্পদের আধার। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor)।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে টাংগুয়ার হাওর, এটি কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত। তাহলে চলুন জেনে নেই টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor) সম্পর্কে। তবে তার আগে জেনে নেই হাওড় কাকে বলে?হাওড় কাকে বলে?
হাওড় এক বিশেষ ভূ-প্রাকৃতিক গঠন যেখানে ভূমিকম্প বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারনে
ভুমি গামলা বা পিরিচের আকৃতিতে নিচে বসে যায় এবং সেখানে জল জমে। সাধারণত বছরের
নির্দিষ্ট সময় এখানে পানি থাকে এবং বাকি সময় এগুলো শুকনো চারণভুমি এবং কৃষিজমি
হিসেবে কাজ করে। টাংগুয়ার হাওর সহ বাংলাদেশের সব হাওড় দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।
টাংগুয়ার হাওর কোথায় অবস্থিত
টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor) বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় ধর্মপাশা এবং
তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টাংগুয়ার হাওর ৩০ টিরও বেশি পাহাড়ি ছড়া/ঝরা বা ঝরনার পানি দ্বারা সমৃদ্ধ। দুই
উপজেলার প্রায় ১৮ টি মৌজার ৫১ টি বিল নিয়ে টাংগুয়ার হাওর গঠিত।
আরও পড়ুনঃ মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত ও কেন বিখ্যাত?
স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি "নয় কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল" নামেও
পরিচিত। টাংগুয়ার হাওর দেশিয় বিভিন্ন মাছের আধার। এজন্য একে "মাদার ফিশারি" ও বলা
হয়।
আরও পড়ুনঃ কান্তজীর মন্দির কোথায় অবস্থিত
১৯৯৯ সালে টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor) কে "প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Crittical Area -
ECA)" ঘোষনা করা হয়।
২০০০ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখে টাংগুয়ার হাওর কে "রামসার সাইট (Ramsar Site)" ঘোষণা করা হয়। এটি
বাংলাদেশের দ্বিতীয় "রামসার সাইট"। প্রথমটি সুন্দরবন।
টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor) এর আয়তন প্রায় ৭ হাজার একর তবে বর্ষাকালে এর আয়তন বেড়ে দাঁড়ায়
প্রায় ২০ হাজার একর।
টাংগুয়ার হাওর কেন বিখ্যাত
টাংগুয়ার হাওর (Tanguar Haor) মূলত পাহাড়ঘেরা বিল, বর্ষাকালে এর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি এবং
শুকনো সময়ে ধানের ক্ষেত এর সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত হলেও এর রয়েছে আরো কিছু
আকর্ষন যেমনঃ
১. জীব বৈচিত্রঃ
টাংগুয়ার হাওর জীব বৈচিত্রে ভরপুর। এখানে পাওয়া যায় ২০৮ প্রজাতির পাখি, ২০
প্রজাতির সাপ, ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২ প্রজাতির কাছিম, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ। এছাড়া শীতের সময় আসে বিভিন্ন প্রজাতির
পরিযায়ী পাখি।
২. মাছঃ
টাংগুয়ার হাওর
তার সুস্বাদু ও দেশি মাছের জন্য বিখ্যাত। এখানে দুই শতাধিক প্রজাতির মাছ পাওয়া
যায়। যার অনেক গুলোই অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
৩. লাকমা ছড়াঃ
টাংগুয়ার
হাওর এর অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান লাকমা ছড়া। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের এই ছড়া
বা ঝর্ণাটি থেকে নেমে আসা পানি টাংগুয়ার হাওর এর অন্যতম উৎস। টেকের ঘাট থেকে খুব
সহজেই এখানে যাওয়া যায়।
৪. ওয়াচ টাওয়ারঃ
টাংগুয়ার
হাওর অন্যতম আকর্ষণ এই ওয়াচ টাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাওরের অসাধারণ দৃশ্য দেখা
যায়। এছাড়া এখানে পানি খুব স্বচ্ছ বলে গোসলের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় এটি। বলাই
নদীর তীরে এর অবস্থান।
৫. জাদুকাটা নদীঃ
একপাশে পাহাড় আর স্বচ্ছ পানির এই নদীর জন্যও অনেক পর্যটক ছুটে
আসেন টাংগুয়ার হাওর এ।
৬.বারিক্কা টিলাঃ
বারিক্কা টিলা বা বারেকের টিলা জাদুকাটা নদী
তীরে অবস্থিত। নদী দিয়ে নৌকায় করে আসা যায়, আবার টেকের ঘাট থেকে বাইক বা
অটোরিকশায় আসা যায়। এখান থেকে টাংগুয়ার হাওর এর অসাধারণ দৃশ্যের পাশাপাশি ভারতীয়
অংশে শাহ আরেফিন এর মাজার দেখা যায়। এছাড়া এখানে রয়েছে দুটি ছরা বা ঝরনা।
৭. শিমুল বাগানঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান টাংগুয়ার
হাওর এর কাছেই অবস্থিত। ১০০ বিঘা জুড়ে প্রায় ৩ হাজার শিমুল গাছ রয়েছে এখানে।
শিমুল বাগানের ঠিক নিচেই নৌকা আসে। অথবা টেকের ঘাট থেকে আসা যায়। এখানে প্রবেশ
মূল্য ২০ টাকা।
৮. হিজল বনঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো হিজল বন এটি। এখানে এমন গাছও আছে যার বয়স ১০০ বছরেরও
বেশি।
৯. নীলাদ্রি লেকঃ
নীলাদ্রি লেক
স্থানীয়ভাবে "পাথর কুয়েরি" নামে পরিচিত। নীলাদ্রি লেকের আনুষ্ঠানিক নাম 'শহীদ
সিরাজি লেক"। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বীর বিক্রম এর
নামানুসারে এই নাম। তবে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এটি নীলাদ্রি লেক নামেই পরিচিত।
১০. ডলুরা শহীদের সমাধিঃ
মুক্তিযুদ্ধে ডলুরা অন্যতম এক রণাজ্ঞন। এখানে যুদ্ধে শহীদ ৪৮
জনকে সমাহিত করা হয়েছে।
সবশেষেঃ টাংগুয়ার হাওর । কোথায় অবস্থিত, কেন বিখ্যাত
আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য সূচি ছিলো টাংগুয়ার হাওর কোথায়
অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে
থাকে তবে শেয়ার করুন ফেসবুক সহ আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর আপনাদের
মতামত জানান কমেন্ট সেকশনে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url