কাপ্তাই হ্রদ কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাংগামাটি জেলায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম বা মানব সৃষ্ট হ্রদ বা লেক ( Lake). এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নির্মিত হলেও এটি আরও বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত। কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম স্বাদুপানির মানব সৃষ্ট বা কৃত্রিম হ্রদ। এটি কর্ণফুলি হ্রদ নামেও পরিচিত।

আমাদের আজকের ব্লগের আলোচ্য বিষয় এই কাপ্তাই হ্রদ। আশা করি কাপ্তাই হ্রদ কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত তা জানতে আমাদের পুরো ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। 

কাপ্তাই হ্রদ কোথায় অবস্থিত

কাপ্তাই হ্রদ রাংগামাটি জেলায় কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলি নদীর উজানে অবস্থিত। তবে এটি  রাংগামাটি সদর, কাপ্তাই, জুড়াছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, লংগদু প্রভৃতি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। কাপ্তাই হ্রদ এর ভৌগলিক অবস্থান ২২ ডিগ্রি ২৯ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং  ৯২ ডিগ্রি ১৭ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। কর্ণফুলি নদীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরী বাধের কারনে সৃষ্ট জলাধারই কাপ্তাই লেক নামে পরিচিত।

কাপ্তাই হ্রদের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি কাপ্তাই বাধের কারণে , যা কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র নামেও পরিচিত। এ বাধের দৈর্ঘ্য ৬৭০ মিটার এবং উচ্চতা ৫৪ মিটার। এছাড়াও এতে রয়েছে ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি স্পিলওয়ে বা পানি নির্গমণ পথ। কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
কাপ্তাই হ্রদের গড় গভীরতা ৯ মিটার, সর্বোচ্চ গভীরতা ৩২ মিটার।
কাপ্তাই হ্রদের পানির মূল উৎস কর্ণফুলি নদী। কাপ্তাই হ্রদ ইংরেজী এইচ (H)  আকৃতি বিশিষ্ট। এর দুটি বাহু শুভলং এর কাছে একটি সংকীর্ণ গিরিখাত বা প্রণালী দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত। কাপ্তাই হ্রদের আয়তন ২৫৬ বর্গ মাইল। 

কাপ্তাই হ্রদের ইতিহাসঃ

        কাপ্তাই হ্রদের তথা কাপ্তাই বাধের নির্মাণ পাকিস্তান আমলে। তবে ব্রিটিশ আমলে ১৯০৬ সালে এটির নির্মান উদ্যেগ গ্রহন করা হয়। 
১৯২৬ সালে সম্ভাবতা যাচাই  এবং জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়।
১৯৪৬ সালে ইংরেজ প্রকৌশলি ই.এ. মুর বাঁধ নির্মানের জন্য বরকল এ স্থান নির্ধারন করেন।
১৯৫১ সালে প্রকৌশলি খাজা আজিমউদ্দিন এবং তার সহকর্মিরা বর্তমান স্থান চূড়ান্ত করেন। 
১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় এর নির্মান কাজ শুরু হয়। 
১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে মূল বাঁধ এর নির্মানকাজ শুরু হয়।
১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাধের নির্মান কাজ শেষ হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছিলো ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেট।
 কাপ্তাই বাধের নির্মানের ফলে বাধের উজানে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি , ২৯ বর্গমাইল সরকারি বনভুমি এবং আরো প্রায় ২৩৪ বর্গমাইল অশ্রেণিভুক্ত  বনভুমি ডুবে গিয়ে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়।

কাপ্তাই হ্রদ কেন বিখ্যাত

কাপ্তাই হ্রদ যদিও একটি কৃত্রিম হ্রদ , তবে এর প্রাকৃতিক দৃশ্যও অসাধারণ। নিম্নে এর বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো বর্ণনা করা হলোঃ
১. কাপ্তাই হ্রদঃ
     কাপ্তাই হ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর । কাপ্তাই হ্রদে জেগে থাকা পাহাড়ের চুড়াগুলো দেখতে ছোট ছোট দ্বিপের ন্যায়। এছাড়া একেক ঋতুতে কাপ্তাই হ্রদ ধারন করে একেক রূপ। এছাড়া হ্রদের পারে থাকা নিবিড় অরণ্য এর সৌন্দর্যে যোগ করেছে অনন্য মাত্রা।
২. ঝুলন্ত সেতুঃ
        ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক কাপ্তাই হ্রদে ঝুলন্ত সেতু স্থাপন করা হয়। এটি কাপ্তাই হ্রদের অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট।   
৩.চাকমা রাজবাড়িঃ
        কাপ্তাই হ্রদের ধারে রয়েছে চাকমা সার্কেলের রাজার রাজবাড়ি বা "চাকমা রাজবাড়ি"। উল্লেখ্য যে, এটি নতুন রাজবাড়ি। পুরনো রাজবাড়ি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে।
৪. রাজবন বিহারঃ
        কাপ্তাই হ্রদের ধারে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার অবস্থিত। এখানে বছরে একবার "কঠিন চীবর দান" উৎসব হয়, যেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে, কাপড় তৈরী এবং রঙ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়।
৫. উপজাতীয় জাদুঘরঃ 
        এখানে রয়েছে পার্ব্যত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহি পোষাক, অলংকার, অস্ত্র এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্রের সংগ্রহ।
৬.শুভলং ঝরণাঃ
        কাপ্তাই হ্রদের অন্যতম এক আকর্ষণ হচ্ছে শুভলং ঝরনা। শুভলং বাজারের খুব কাছেই এটি অবস্থিত । প্রায় ১৪০ ফুট উচু থেকে পানি আছড়ে পড়ে কাপ্তাই হ্রদে। বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুনে।
৭.বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিঃ
            মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রৌফ এর সমাধি স্থল নানিয়ারচর উপজেলায় বুড়িঘাট এলাকায় একটি টিলার উপরে অবস্থিত। এখানেও কাপ্তাই হ্রদের জলপথে আসা যায়।
৮. কাপ্তাই বাধঃ
        কাপ্তাই হ্রদের অন্যতম আকর্ষন হচ্ছে কাপ্তাই বাধ। এখান থেকেই কাপ্তাই হ্রদের শুরু বলা যায়। এখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হতে অনুমতি নিয়ে স্পিলওয়ে দেখা যায়।
৯. কায়াকিংঃ
        কাপ্তাই এর কাছেই কর্ণফুলি নদীতে রয়েছে কায়াকিং এর ব্যাবস্থা, চাইলে এখানে উপভোগ করা যায় কায়াকিং।
১০. কেবল কারঃ 
        কাপ্তাই হ্রদের পাড়েই শেখ রাসেল ইকো পার্কে রয়েছে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের জন্য কেবল কার। যাতে করে উচু থেকে কাপ্তাই হ্রদের এবং আশেপাশের অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

শেষ কথাঃ কাপ্তাই হ্রদ কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

কাপ্তাই হ্রদ কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত এ নিয়ে ছিলো আমাদের আজকের আর্টিকেল। কাপ্তাই হ্রদের আরো বিভিন্ন আকর্ষনের মধ্যে রয়েছে, পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট, নৌ-বাহিনীর পিকনিক স্পট, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এছাড়া জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় মুপ্পেছড়া ঝর্ণা, ধুপপানি ঝর্ণা এ সকল জায়গায় যাওয়ার জন্যেও কাপ্তাই হ্রদের জলপথ ব্যাবহার হয়। আশা করি, আমাদের আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের ভাল লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনাদের ফেসবুক, টুইটার এবং হোয়াটসএপে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪