রিয়াজুল জান্নাহ । দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ
নশ্বর এ পৃথিবীতে রয়েছে জান্নাত বা স্বর্গের একটি অংশ। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্য। আর রিয়াজুল জান্নাহ ( ভিন্ন বানানে রিয়াদুল জান্নাত) বা দুনিয়াতে জান্নাতের অংশের ঘোষক স্বয়ং মহানবী রাসুলুল্লাহ (সা.)। এখানে নামাজ ও ইবাদাত বন্দেগীর রয়েছে বিশেষ ফজিলত। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় এই রিয়াজুল জান্নাহ।
আশা করি এ বিষয়ে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়বেন। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই কোথায় এই রিয়াজুল জান্নাহ বা দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রিয়াজুল জান্নাহ । দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ
- রিয়াজুল জান্নাহ কোথায়
- রিয়াজুল জান্নাহ চেনার উপায়
- রিয়াজুল জান্নাহ এর ভেতরের বিবরণ
- সবশেষে - রিয়াজুল জান্নাহ । দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ
রিয়াজুল জান্নাহ কোথায়
ইসলাম ধর্মের পবিত্র তিন মসজিদের একটি হচ্ছে মসজিদে নববি। অপর দুটি হচ্ছে মসজিদুল
হারাম এবং বাইতুল মুকাদ্দাস বা আল-আকসা মসজিদ। এই মসজিদে নববিতেই
অবস্থিত রিয়াজুল জান্নাহ। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে মসজিদে নববিতে মহানবি (সা.) এর
রওজা মুবারাক এবং তার মিম্বর এর মধ্যবর্তি স্থানকে রিয়াজুল জান্নাহ বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ জানাজার নামাজের নিয়ম, গুরুত্ব এবং ফজিলত
রিয়াজুল জান্নাহ এর অবস্থান জানিয়ে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে,
"আমার ঘর ( বর্তমানে দাফনের স্থান বা রওজা মুবারাক) এবং মিম্বরের মাঝের জায়গা
জান্নাতের বাগানগুলোর একটি আর আমার মিম্বর আমার হাউজের (হাউজে কাওসার) এর উপর
অবস্থিত।" - বুখারি নং ১১৯৬,১১২০ এবং মুসলিম হাদিস নং ২৪৬৩।
আরও পড়ুনঃ সালাতুল তাসবিহ নামাজ কখন পড়তে হয়?
রিয়াজুল জান্নাহকে মসজিদে নববির মুল কেন্দ্র বিবেচনা করা হয়। এ স্থানটি ইসলামের
অন্যতম ফজিলতপূর্ণ স্থান। এখানে দোয়া কবুল হয়। এ কারণে এখানে হজ্ব এবং উমরাহ করতে
আসা মানুষদের প্রচণ্ড ভীড় হয়।
রিয়াজুল জান্নাহ চেনার উপায়
মসজিদে নববির ভেতরে রিয়াজুল জান্নাহকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। এই স্থানের দৈর্ঘ্য ২২ মিটার এবং প্রস্থ ১৫ মিটার। এ স্থানটি সাদা ও সবুজ রঙের কার্পেটে ঢাকা। যেখানে বাকি
মসজিদে লাল রং এর কার্পেট দেয়া। এছাড়া রিয়াজুল জান্নাহতে রয়েছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। আলাদা রঙএর কার্পেট দেখে সহজেই রিয়াজুল জান্নাহ শণাক্ত করা যায়।
রিয়াজুল জান্নাহ এর ভেতরের বিবরণ
রিয়াজুল জান্নাহ এর ভেতরে রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ। এগুলোকে বলা হয় রহমতের স্তম্ভ বা
খুঁটি। এর প্রত্যেকটির রয়েছে পৃথক পৃথক নাম এবং ইতিহাস।
এ প্রসংগে ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত হয়েছে, "তিনি বলেন, আমি সালামা বিন আকওয়ার সঙ্গে আসতাম এবং মুসহাফের কাছের স্তম্ভের নিকট (অর্থাৎ রিয়াজুল জান্নাতে) সালাত আদায় করতাম। আমি বললাম, হে আবু মুসলিম, আপনাকে দেখি এ স্তম্ভের কাছে সালাত আদায় করতে বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে এ স্তম্ভের কাছে সালাত আদায় করতে আগ্রহী দেখেছি।" (বুখারি: ৫০২; মুসলিম: ৫০৯)
আরও পড়ুনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে এই স্তম্ভগুলো খেজুর গাছের তৈরী ছিলো।
ওসমানীয় সুলতান সেলিম পরবর্তীতে এ স্তম্ভগুলো লাল-সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন।
পরবর্তিতে আরেক ওসমানীয় সুলতান আব্দুল মাজিদ স্তম্ভগুলোর আরো পুনঃনির্মান ও সংস্কার করেন।
১৯৯৪ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ স্তম্ভগুলিকে আরো দামি পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন
এবং মেঝেতে দামি কার্পেট বিছিয়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ মনে মনে তালাক দিলে কি তালাক হয়?
এ স্তম্ভগুলোর নাম ও বর্ণনা নিম্নরূপ
১. উস্তুওয়ানা হান্নানা ( সুবাস স্তম্ভ)ঃ
মসজিদে নববি নির্মানের পরে প্রথমদিকে মিম্বর
ছিলো না। রাসুল (সা.) একটি খেজুর গাছের গুড়ি বা কাণ্ডে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন।
পরবর্তীতে এখানে দুটি সিড়িসহ বসার স্থান তৈরী করা হয়। এখানে নিয়মিত সুগন্ধি
মাখানো হয় বলে একে সুবাস স্তম্ভ বলা হয়।
২. উস্তুওয়ানা সারিরঃ
'সারির' শব্দের অর্থ বিছানা। ইতিকাফ করার সময়ে এ স্থানে
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্য বিছানা করা হত। ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত,
সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্য খেজুরপাতার মাদুর এবং বালিশ রাখা হত। বুখারি শরীফ এর হাদিস
মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে মীমাংসা করার জন্য এই স্তম্ভের কাছে বসতেন।
৩. উস্তুওয়ানা আয়েশাঃ
রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেন, " আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, মানুষ যদি তার ফজিলত জানত তবে
সেখানে স্থান পাবার জন্য প্রতিযোগিতা করত"। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওফাত এর পরে
হজরত আয়েশা (রা.) তার ভাগ্নে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) কে স্থানটি দেখিয়ে
দেন।
৪. উস্তুওয়ানা উফুদ (প্রতিনিধি স্তম্ভ)ঃ
রাসুলুল্লাহ
(সা.) বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সাথে এখানে বৈঠক করতেন এবং তাদের
কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতেন এবং বিভিন্ন বিষয় ব্যাখা করতেন।
৫. উস্তুওয়ানা আবু লুবাবা (তওবা স্তম্ভ)ঃ
প্রখ্যাত সাহাবী আবু লুবাবা (রা.) তার ভুলের
তওবার জন্য এ স্তম্ভের সাথে নিজেকে বেধে রাখেন এবং বলেন যে আল্লাহ তার তওবা কবুল
যতক্ষণ না করবেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তার বাধন খুলে না দিবেন ততক্ষণ তিনি
এখানে বাধা থাকবেন। বিভিন্ন মতবাদ অনুযায়ী, ৫০ দিন পরে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন
এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তার বাধন খুলে দেন।
৬. উস্তুওয়ানা হারছ বা মিহরাছ ( পাহাড়াদারের স্তম্ভ)
৭.উস্তুওয়ানা জিব্রাইল (আ.)
৮. উস্তুওয়ানা তাহাজ্জুদ
সবশেষে - রিয়াজুল জান্নাহ । দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ
যেসকল জায়গায় সালাত আদায় অতি ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় তার একটি হচ্ছে রিয়াজুল
জান্নাহ। সম্ভব হলে এর সবগুলি স্তম্ভের নিকট গিয়ে নফল সালাত আদায় করা উচিৎ। তবে
এখানে প্রচুর ভীড় হয়। তাই সালাত আদায়ের সময় এমন কোন আচরন করা যাবে না যাতে অন্য
মুসুল্লিদের সালাত আদায়ে কষ্ট হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের
সবাইকে রিয়াজুল জান্নাহ তথা দুনিয়াতে জান্নাতের অংশ দেখার এবং সেখানে সালাত
আদায় ও রাসুলুল্লাহ (সা.) রওজাতে দরুদ ও সালাম পেশ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url