ইস্তেখরা কি? ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়

 রাসুলুল্লাহর যে সকল সুন্নাত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইস্তেখরা এবং ইস্তেখরার নামাজ। ইস্তেখরা (استخارة) আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ,' কল্যাণ কামনা করা বা এমন কিছু কামনা করা যাতে কল্যাণ আছে'।  আজ আমাদের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ইস্তেখরা কি এবং ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়।

 আশা করি আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই ইস্তেখরা কি এবং ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ইস্তেখরা কি? ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়

  • ভূমিকা
  • ইস্তেখরা কি?
  • ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়
  • ইস্তেখরার নামাজের ফজিলত
  • ইস্তেখরার নামাজ  পড়ার নিয়ম
  • সবশেষে

ইস্তেখরা কি?

নতুন কোন কাজ শুরুর পূর্বে বা কোন কাজে দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগলে ইস্তেখরা করতে হয়। দুই রাকাত সালাত এবং বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সাহায্য প্রার্থণা করা কে ইস্তেখরা বলা হয়।- ইবনে মাজার, ফাতহুল বারি, সহিহ বুখারি।

ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়

যেমনটা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে সালাতুল ইস্তেখরা বা ইস্তেখরার নামাজ আদায় করতে হয় নতুন কোন কাজ শুরুর পুর্বে সে কাজে যেন কল্যান ও রহমত আসে তার জন্য এবং কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগলে সেক্ষেত্রে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন হারাম বা মাকরূহ কাজের জন্য ইস্তেখরার নামাজ আদায় করা যাবে না।
আর যদি সময়ের ব্যাপারে বলা যায়, তাহলে নামাজের জন্য নিষিদ্ধ সময় ব্যাতিত যেকোন সময়েই ইস্তেখরার নামাজ পড়া যায়। কেবল রাতে বা মাঝ রাতে এই নামাজ পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই।

ইস্তেখরার নামাজের ফজিলত

ইস্তেখরার নামাজ নফল হলেও অনেক আলেমের মতে এটি সুন্নত। ইস্তেখরার নামাজ এর মাধ্যমে আমরা উত্তম ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এর ফজিলত এর ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১. আল্লাহ পাক বলেছেন, "এটা তো খুবই সম্ভব, যে তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে করো অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আবার এটাও সম্ভব যে তোমরা কোন জিনিসকে ভালো মনে করো কিন্তু তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর প্রকৃত বিষয় তো আল্লাহ পাক জানেন এবং তোমরা জানো না- (সুরা বাকারা- আয়াত ২১৬)" 
২. আল্লাহ পাক আরো বলেছেন, "এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করতে থাকুন, অতঃপর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তখন  আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চই আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন। - (সূরা আল ইমরান - আয়াত ১৫৯)"
৩. মানুষ ইস্তেখরার নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তি হয় এবং সফলতার দিকনির্দেশ পায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক  বলেন," তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, অনুরোধ কর, সংগোপনে। - (সূরা আরাফ - আয়াত ৫৫)।
৪. হজরত জাবের ইব্নে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে কুরআনের সুরা শেখাতেন; ঠিক সেভাবে (গুরুত্বের সঙ্গে) প্রতিটি কাজের আগে আমাদের ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন - (তিরমিজি- ৪৮০)

ইস্তেখরার নামাজ  পড়ার নিয়ম

ইস্তেখরার নামাজ পড়ার নিয়ম অন্য সকল নফল নামাজের মতই। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে  ইস্তেখরার বিশেষ দুয়া পাঠ করতে হবে। হজরত জাবের ইব্নে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন কাজের সংকল্প করে তখন দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে এবং এই দুয়াটি পাঠ করে- 

 'ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের ভিত্তিতে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। তোমার শক্তির সাহায্য প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট অনুগ্রহ কামনা করছি  আমি তোমার ইচ্ছা ব্যতিত কোন কাজ করতে পারব না। তুমি সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত  আমি কিছুই জানি না। সব গোপন কথা তোমার জানা। হে আল্লাহ! তুমি যদি ইচ্ছা কর কাজটি (উদ্দেশ্য) আমার জন্য আমার দীনে, দুনিয়ায়, আমার জীবনে, আমার পরকালে  কল্যানকর হবে, তাহলে তা আমার জন্যে ব্যবস্থা করে দাও। আমার জন্য তা সহজ করে দাও। তারপর আমার জন্য বারাকাত দান করো। আর তুমি যদি কাজকে আমার জন্য আমার দীন, আমার জীবন, আমার পরকালে  অকল্যাণকর মনে করো, তাহলে আমাকে তার থেকে, আর তাকে আমার থেকে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্যে যা কল্যাণকর তা করে দাও। অতঃপর এর সঙ্গে আমাকে যুক্ত করো।'হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, ‘ কাজটিবলার সময় নিজের প্রয়োজনের ব্যাপারটি স্মরণ করতে বা বলতে হবে।"          সূত্রঃ বুখারী ১১৬২, ৬৩৮২, ৭৩৯০, আবূ দাঊদ ১৫৩৮, আত্ তিরমিযী ৪৮০, ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৩, নাসায়ী ৩২৫২, আহমাদ ১৪৭০৭, ইবনু হিব্বান ৮৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯২১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০১৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮২, সহীহ আল জামি৮৭৭।

ছবিঃ ইস্তেখরার দুয়া

 

সবশেষে : ইস্তেখরা কি? ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়

আজকে আমাদের আর্টিকেলের মূল বিষয় ছিলো, ইস্তেখরা কি? ইস্তেখরার নামাজ কখন পড়তে হয়। এর সাথে ইস্তেখরার নামাজ এর নিয়ম এবং ফজিলত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ পাক আমাদের  ইস্তেখরার নামাজ আদায় এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর এই সুন্নাত পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪