চুল পড়া । কারণ ও প্রতিকার

 চুল মানুষের চেহারা তথা সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অংশ। প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতিদিন কিছু চুল পড়ে যায় আবার নতুন চুল গজায়। আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি এর বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত চুল পড়া বা ঝরে যাওয়া স্বাভাবিক। সমস্যা হয় তখনি যখন নতুন চুল গজানোর হার এর চেয়ে অনেক কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে দেখা দেয় টাক পড়া সহ চুল পাতলা হবার সমস্যা। চুল পড়ার সমস্যাটি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। চুল পড়া বা ইংরেজিতে Hair fall বা Hair loss নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। তাহলে চলুন জেনে নেই, চুল পড়ার কারন ও প্রতিকার।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চুল পড়া । কারণ ও প্রতিকার

  • ভূমিকা
  • চুল পড়ার কারন
  • চুল পড়ার প্রতিকার
  • শেষ কথা

চুল পড়ার কারণ

বিভিন্ন কারনেই চুল পড়তে পারে, তবে নিম্নলিখিত কারণগুলোই প্রধানঃ

১.বংশগত কারণঃ
        অনেকের বংশগত কারনে চুল পড়তে পারে। মা -বাবা বা পূর্বপুরুষদের কারো চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে ব্যাক্তির চুল পড়তে পারে। 
. হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ
        বয়ঃসন্ধি কালে বা কোন অসুখে যেমন পলিসিস্টিক অভারি সিন্ড্রোম জাতীয় অসুখে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরী করে। যা চুল পড়ার অন্যতম কারন।
. ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির প্রভাবঃ
        সরাসরি সুর্যের আলোতে থাকলে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির প্রভাবে চুলের গোড়া বা ফলিকল দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
. পুষ্টিহীনতাঃ 
        শরীরে দীর্ঘদিন পুষ্টিহীনতা বা খাদ্যউপাদানের (যেমন শর্করা, আমিষ, ফ্যাট) ইত্যাদির ঘাটতি হলে ফলস্বরুপ চুল পড়ে যেতে পারে।
.মানসিক কারনঃ
        দীর্ঘদিন দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা উদ্বেগের (স্ট্রেস) মাঝে থাকলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। তবে সমস্যা সাময়িক। এবং মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
. কেমোথেরাপিঃ
        ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাবহৃত কেমোথেরাপির ফলে চুল পড়ে যায়। সাধারণত একারণে চুল পড়লে চুল আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না।
. চুল শক্ত করে বাঁধাঃ
        চুলে কোন বিশেষ স্টাইলের জন্য যদি চুল যদি টাইট করে বাঁধা হয় বা দীর্ঘ সময় বেধে রাখা হয় তাহলেও চুলের গোড়া বা ফলিকল দুর্বল হয়ে চুল পড়ে যেতে পারে।
৯. অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণঃ
        প্রয়জনের অতিরিক্ত ভিটামিন-এ গ্রহণ করা হলেও চুল পড়ে যায়।
১০. চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যাবহারঃ
            চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক যেমন ব্লিচ, রং, স্ট্রেটনার, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদির অতিরিক্ত ব্যাবহার চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
১১. বাড়তি শ্যাম্পুর ব্যাবহারঃ
        চুল পরিস্কারের জন্য শ্যাম্পু ব্যাবহার করা প্রয়োজন, কিন্তু বাড়তি শ্যাম্পুর ব্যাবহার চুল পড়ার কারন হতে পারে। চুলের যত্নে তাই ব্যাবহার করা যেতে পারে সালফেট্মুক্ত বা ডিটারজেন্ট মুক্ত শ্যাম্পু।
১২. ভেজা অবস্থায় চুল আচরানোঃ
                অনেকেই গোসলের পরপরই ভেজা অবস্থায় চুল আচড়ান। তবে তা মোটেও ঠিক না, কারন এসময় চুলের গোড়া নরম থাকে বিধায় চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৩. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
            অনেক সময় বিভিন্ন ঔষধের যেমন এন্টি-বায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে চুল পড়তে পারে। আবার কোন অস্ত্রোপচার বা দীর্ঘ রোগ ভোগের পরেও চুল পড়ার ঘটনা দেখা যায়।

চুল পড়ার  প্রতিকার

১. সুষম খাদ্য গ্রহণঃ
        খাদ্য তালিকায় সুষম পুষ্টি সম্পন্ন খাবার রাখতে হবে। খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে প্রচুর পরিমানে ফলমূল, শাকসব্জি, চর্বিবিহীন আমিষ, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
২.নিমের ব্যাবহারঃ
        চুল পড়া রোধে নিম বহুল ব্যাবহৃত। নিমে থাকা উচ্চমাত্রার ফ্যাটি এসিড চুলের গোরা শক্ত করে চল পড়া রোধ করে। নিম পাতার রস এর সাথে আমন্ড অয়েল, নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে সামান্য গরম করে চুলে লাগালে তা চুল পড়া রোধে সহায়তা করে।
৩.জবা ফুলের ব্যাবহারঃ
        চুল পড়া বন্ধে দারুন এক উপাদান জবা ফুল। জবা ফুল এবং জবা ফুলের পাতা নারকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হলে তা মাথার ত্বকে ব্যাবহার করা যায়। এই তেল লাগানোর আধা ঘন্টা পরে সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। 
৪.পেঁয়াজের রসঃ
        পেঁয়াজের রস চুল পড়া রোধে খুবই কার্যকর। পেঁয়াজের রসের আছে ছত্রাকনাশক গুন। পেঁয়াজের রস মাথার তালুতে এবং চুলে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
৫.মেহেদি বাটাঃ
        মেহেদি পাতা বেটে চুলের গোড়ায় লাগালে চুল পড়া থামে।
৬. এলভেরাঃ
            চুল পড়া রোধে এবং রূপচর্চায় আরেক কার্যকরি উপাদানের নাম এলভেরা বা ঘৃতকুমারি। এলভেরার জেল মাথায় ও চুলে মেখে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
৭. সমন্বিত প্যাক ব্যাবহারঃ
             পেঁয়াজের রস, মেহেদি পাতা বেটে, এলভেরা এবং টক দই একসাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সবশেষে ঃ চুল পড়া । কারণ ও প্রতিকার

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য সূচি ছিল চুল পড়া এর কারণ ও প্রতিকার। আশা করি, আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি আর্টিকেলটি আপনাদের কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের সাইট ভিজিট করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪