ষাট গম্বুজ মসজিদ । কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

পরিচিতিঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ

 বাংলাদেশের তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের একটি হচ্ছে মসজিদের শহর বাগেরহাট। এই মসজিদের শহর এর মধ্যমণি হচ্ছে  ষাট গম্বুজ মসজিদ। বাংলাদেশ সহ প্রায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো একটি মসজিদ এই ষাট গম্বুজ মসজিদ।

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য সূচি এই ষাটগম্বুজ মসজিদ। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এই মসজিদ সম্পর্কে।

পোস্ট সুচিপত্রঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ । কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

  • ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত
  • ষাট গম্বুজ মসজিদ এর নামকরণ
  • ষাট গম্বুজ মসজিদ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
  • ষাটগম্বুজ মসজিদ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ
  • ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বিখ্যাত
  • ষাট গম্বুজ মসজিদ এর আশেপাশের আরো স্থাপনা

ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিতঃ

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় শহরের কেন্দ্র থেকে ৭ কি.মি. পশ্চিমে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে ঘোড়াদিঘীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত।

ষাট গম্বুজ মসজিদ এর নামকরণ

ষাট গম্বুজ মসজিদ নাম হলেও এ মসজিদের ছাদে গম্বুজ সংখ্যা সাত সারিতে এগারোটি করে ৭৭ টি। সেই সাথে চারটি মিনারে একটি করে চারটি মোট ৮১ টি। মসজিদের ভেতরে পাথরের তৈরী পিলার বা স্তম্ভ রয়েছে ৬০ টি যাকে ফারসি ভাষায় খাম্বাজ বলা হয়। কথিত আছে এই খাম্বাজ শব্দটি বিবর্তিত হয়ে গম্বুজ শব্দটি এসেছে। যা থেকে নাম হয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ।
আরও পড়ুনঃ
আবার সাত সারিতে গম্বুজ রয়েছে বলে সাত গম্বুজ এবং সেখান থেকে ষাট গম্বুজ নামটি এসেছে বলে ধারণা করা হয়। তবে প্রথমোক্ত মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।

ষাট গম্বুজ মসজিদ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পঞ্চদশ শতাব্দির মাঝামাঝি খান-আল-আজম উলুঘ খান ওরফে খান জাহান আলি নামক একজন ইসলাম প্রচারক ও শাসক এই ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। কোন শিলালিপি বা দলিল পাওয়া না গেলেও স্থাপত্যশৈলি দেখে এটিকে খান জাহান আলির কীর্তি বলে ধরে নেয়া যায়। 
আরও পড়ুনঃ
এটি একই সাথে তার দুর্গ, কাচারি বা বিচারালয় মসজিদ ছিলো। ষাট গম্বুজ মসজিদ এ বসেই তিনি তার রাজ্য যা খলিফাতাবাদ নামে পরিচিত ছিলো তা পরিচালনা করতেন। 
বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন যে ১৫ টি হারিয়ে যাওয়া শহরের তালিকা করে তাতেও উল্লেখ আছে বাগেরহাট শহর এবং ষাট গম্বুজ মসজিদ এর।
১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এবং পরবর্তিতে পাকিস্তানি সরকার এর সংস্কার কাজ করেন।
১৯৮৫ সালে ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং বাগেরহাট ইউনেস্কো (UNESCO) কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যর নিদর্শন বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হয়।
আরও পড়ুনঃ
 বর্তমানে ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশ প্রত্নত্বত্ত অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত পুরাকির্তি।

ষাট গম্বুজ মসজিদ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ

দেয়াল ও দরজাঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ বাইরের দিকে উত্তর-দক্ষিনে ১৬০ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০৪ ফুট লম্বা। দেয়াল প্রায় ৮ ফুট চওড়া। পুর্ব দিকে রয়েছে ১১টি দরজা যেগুলো খিলানযুক্ত। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে ৭ টি করে ১৪ টি দরজা।মোট দরজা ২৫ টি। 
আরও পড়ুনঃ
 মিনারঃ মসজিদের চার কোনে রয়েছে চারটি মিনার। ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনের মিনার দুটির একটির নাম রওশন কোঠা ও অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা।
আরও পড়ুনঃ
মেহরাবঃ ষাট গম্বুজ মসজিদে মোট মেহরাব সংখ্যা ১০ টি। মাঝের মেহরাবটি অনেক বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এর উত্তরে ৪টি এবং দক্ষিণে ৫ টি মেহরাব রয়েছে এছাড়া কেন্দ্রীয় মেহরাবের পাশে রয়েছে একটি দরজা, যা দরবারের কাজে ব্যাবহার হতো বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ
গম্বুজ ও স্তম্ভঃ  ষাট গম্বুজ মসজিদে রয়েছে মোট ৮১ টি গম্বুজ। যার মধ্যে ৭৭ টি ছাদে এবং ৪ টি মিনারের উপরে ৪ টি গম্বুজ। মেহরাবের মধ্যবর্তী ৭ টি গম্বুজ চৌচালা আকৃতির এবং বাকিগুলো অর্ধগলাকৃতির। মসজিদের ভেতরে রয়েছে ৬০ টি পাথরের তৈরি পিলার বা স্তম্ভ। এই স্তম্ভের পাথরগুলো রাজমহল থেকে আনা হয়েছিলো।

ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বিখ্যাত

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ও পুরনো মসজিদ। অত্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার এবং মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই এর প্রতিষ্ঠা। এটি বিখ্যাত এর সুন্দর নকশা এবং স্থাপত্যের জন্য। এছাড়া এটির সাথে জড়িত রয়েছে এই এলাকার অন্যান্য স্থাপনার প্রতিষ্ঠা।

ষাট গম্বুজ মসজিদ এর আশেপাশের আরো স্থাপনা

ঘোড়া দিঘীঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ এর ঠিক পশিমেই রয়েছে ঘোড়া দিঘী। অত্র এলাকার মানুষের পানির কষ্ট দূর করার জন্য খান জাহান আলি এই দিঘী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিবি বেগনির মসজিদঃ ষাট গম্বুজ মসজিদের আধা কিলোমিটার আগেই রয়েছে 'বিবি বেগনির মসজিদ'। এটিও অত্যন্ত কারুকার্যময় একটি মসজিদ।
আরও পড়ুনঃ
বিবি বেগনির মসজিদ এর কাছেই রয়েছে আরো একটি মসজিদ যার নাম চূনাখোলা মসজিদ।
এছাড়া ষাট গম্বুজ মসজিদ এর কাছে মহাসড়কের অপর পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।
জাদুঘরঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ এর প্রাংগনে রয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ জাদুঘর। বিভিন্ন সময়ের খননে এখানে পাওয়া সকল প্রত্নবস্তু সংরক্ষিত আছে এই জাদুঘরে।
খান জাহান আলির মাজারঃ ষাট গম্বুজ মসজিদের খুব কাছেই রয়েছে খান জাহান আলির মাজার। এটির সাথে ষাট গম্বুজ মসজিদের গঠনের মিল আছে। এই মাজারে রয়েছে একটা বিশাল দিঘী যা এখানে থাকা কুমিরের জন্য বিখ্যাত।

সবশেষেঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ । কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ছিলো, ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত। আশা করি আর্টিকেল পুরোটা পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে । ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪