পরিচিতিঃ তাহাজ্জুদের নামাজ । সময়, নিয়ম, গুরুত্ব এবং ফজিলত
ইসলামে পাচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে যে সকল নফল ইবাদত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং
কোরআন শরীফে সরাসরি নির্দেশিত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। এটি "কিয়াম-উল- লাইল বা গভীর রাত্রির নামাজ বা মধ্য রাতের নামাজ" নামেও পরিচিত।
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ 'নিদ্রা হতে জাগরণ করা'। এ প্রসংগে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে
বলেছেন,
"রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন" - সূরা বনি ইসরাইল
-৭৯। অধিকাংশওলামায়ে কেরামের মতে এ আয়াত দ্বারা তাহাজ্জুদের নামাজকে
বুঝানো হয়েছে।আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় তাহাজ্জুদের
নামাজ এবং এর সময় , নিয়ম, গুরুত্ব এবং ফজিলত নিয়ে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
তাহাজ্জুদের নামাজ এর সময়
তাহাজ্জুদের নামাজ গভীর রাতের নামাজ। সাধারণত এশার নামাজের ওয়াক্ত শেষ হবার পর
থেকে ফজর নামাজের ওয়াক্ত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ এর ওয়াক্ত।
তাহাজ্জুদের নামাজ এর পরে বেতের নামাজ আদায় করে নায়া উত্তম। তবে একান্তই যদি রাতে
উঠা সম্ভব না হয় তবে এষার নামাজের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে তাহাজ্জুদের নামাজ
পড়ে বেতের নামাজ পড়ে নিতে হবে।
তাহাজ্জুদের নামাজ এর সময় সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে হাদিসে
বর্ণিত,
"রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ পাক পৃথিবীর
নিকটবর্তী হন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব, যে আমার কাছে
কিছু চাইবে আমি তা মঞ্জর করে দেব, যে ক্ষমা চাইবে তাকে ক্ষমা করে দেব।"
-(বুখারি, মুসলিম)
আল কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,
"নিশ্চই তারা ধৈর্যশীল, অনুগত, আল্লাহর পথে ব্যায়কারি এবং রাতের শেষ প্রহরে
ক্ষমা প্রার্থি। (সুরা আল ইমরান -১৭)"
তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ পাক আরও বলেন,
" তারা রাতে সামান্যই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং শেষ
রাত্রে ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সুরা আল-যারিয়াত-১৭,১৮)
নফল ইবাদাতের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , ফজিলত পূর্ণ এবং
বরকতময়। এমনকি তাহাজ্জুদের নামাজ রাসুল (সা.) এর উপরে ফরজ ছিলো। মেরাজের রাত্রির
পরে তার উম্মতের উপর তা নফল হয়ে যায়। আল কোরআন এবং হাদিসের বিভিন্ন জায়গায়
তাহাজ্জুদের নামাজ এর ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। যেমনঃ
"আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তার প্রতি সিজদাহ করে এবং দাঁড়িয়েই
রাত্রি কাটিয়ে দেয়"। সূরা আল- ফুরকান - ৬৪।
অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন
"অবশ্যই রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য কার্যকর এবং সে সময়ে
কুরআন পাঠ একেবারে যথার্থ।" সুরা আল মুজাম্মিল- ৬।
আরেক স্থানে আল্লাহ পাক বলেন,
" আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে। এটি তোমার প্রতি অতিরিক্ত
দায়িত্ব। আর তোমার পালনকর্তা শীঘ্রই তোমাকে উচ্চ স্থান প্রদান করবেন" ।সুরা বনি
ঈসরাইল- ৭৯।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
" আর তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের রবকে ডাকে আশায় ও ভয়ে। আর আমি তাদের যা
দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।" সুরা সাজদা-১৬।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
"প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ পাক পৃথিবীর নিকটবর্তী হন এবং বলেন, যে
আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব, যে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তা
মঞ্জর করে দেব, যে ক্ষমা চাইবে তাকে ক্ষমা করে দেব।" -(বুখারি,
মুসলিম)
সুতরাং এর থেকে বোঝা যায় যে, তাহাজ্জুদ নামাজ কতখানি গুরুত্ব পূর্ণ এবং
ফজিলত পূর্ন।
শেষ কথাঃ তাহাজ্জুদের নামাজ
আমাদের আজকের পোস্টের/ব্লগের আলোচ্য বিষয় ছিল, তাহাজ্জুদের নামাজ এবং
এর সময়, নিয়ম,গুরুত্ব এবং ফজিলত নিয়ে। আশা করি আমাদের পোস্টটি পুরোটা
পড়েছেন তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আল্লাহ পাক আমাদের
সবাইকে তাহাজ্জুদের নামাজ সহ সকল ফরজ ইবাদত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আলহামদুলিল্লাহ। রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া সবাই যেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি।
আমিন।