পেঁপে (ভিন্ন বানানেঃ পেপে) অত্যন্ত সাধারণ একটি খাদ্য, যার নাম সকলেই জানে। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Carica papaya। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় পেঁপের অবস্থান অন্যতম। এটি কাঁচা ও পাকা দুই
ভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে । পেপে এমন একটি ফল যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে।
পেঁপের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। এর ইউনানী নাম পাপিতা এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। আজকের আর্টিকেলে আমরা পেপের উপকারিতা এবং পেঁপে খাবার নিয়ম সম্পর্কে
জানব। আশা করি আপনারা পুরো আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়বেন।
পেঁপের উপকারিতা
চিকিৎসক হোক কী পুষ্টিবিদ, সকলেই রোজের খাদ্যতালিকায় পাকা পেঁপে রাখার
পরামর্শ দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন A,C এবং K, আরও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,
পটাসিয়াম ও প্রোটিন। ফাইবারের সন্ধানও পাওয়া যায় পেঁপেতে।
১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ক্যালোরি থাকে ৩২
কিলোক্যালরি, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬৯
মিলিগ্রাম, খনিজ ০.৫ মিলিগ্রাম এবং ফ্যাট বা চর্বি থাকে ০.১ মিলিগ্রাম। নানা
রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে পেঁপে। পেঁপের আরও কিছু উপকারিতা
নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
১. দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় পেঁপে :
অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী,
প্রতিদিন পেঁপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে
যায়। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবা্র প্রাথমিক কারণ,
প্রতিদিনের খাবারে তুলনামূলকভাবে কম পুষ্টি গ্রহণ করা। পেঁপেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, এবং ই এর উপস্থিতি আপনার চোখের জন্য ভাল।
২.পেটের উপকারে পেঁপেঃ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্ষুধা বাড়ানোর পাশাপাশি পেট পরিষ্কার করে পেঁপে। সেই সঙ্গে
গ্যাসন-এসিডিটির সমস্যা কমায় পেঁপে । বদ হজমের রোগিদের পাকা পেঁপে খেলে খুব উপকার মিলবে। পাঁকা পেপে খেলে মুখে রুচি
বাড়ে।
৩.পাইলসের চিকিৎসায় পেঁপেঃ
যাদের পাইলস বা অর্শ্ব রোগ আছে তাদেরও খুব উপকারে আসে
পেঁপে। কাঁচা পেঁপের আঠা চিনি বা বাতাসার সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শ বা পাইলস ভালো
হয়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা পেঁপের ৫- ৭ ফোটা আঠা বাতাসার সাথে মিশিয়ে খেলে পাইলস বা অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ
হয়।
৪.কোলেস্টেরল কমায় পেঁপে:
অন্যান্য ফলের মত পেঁপেতে কোলেস্টেরল নেই। আর পেঁপেতে আছে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার। তাই কোলেস্টেরলের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাঁরা প্রতিদিনের খাবার
তালিকায় পেঁপে রাখুন। অন্যান্য কোলেস্টেরল যুক্ত খাবারের বদলে পেঁপে খান। তাহলে
আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫.কৃমিনাশক হিসেবে পেঁপে:
কাঁচা পেঁপের আঠা এবং বীজ কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এর আধা ঘন্টা
পরে উষ্ণ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ)
চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যাবে। কৃমি বিনাশের ক্ষেত্রে পেঁপে এটি ফলপ্রদ ওষুধ।
৬.যকৃত বৃদ্ধি রোগের উপশমে পেঁপেঃ যকৃত বৃদ্ধি রোগে এক চামচ চিনি,
৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠার সাথে মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি
সারাদিনে ৩ বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে রোগ কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন
খাওয়ার পর সপ্তাহে দুই দিন করে খাওয়াই ভালো। এ পদ্ধতিতে টানা ১ মাস খেলে ভাল ফল
পাওয়া যাবে।
৭.ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় পেঁপেঃপেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিটা
ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভিনয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টো অক্সান্থিন । বিটা ক্যারোটিন ফুসফুস ও অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। Harvard School of Public Health’s Department পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে
যে পেঁপের বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার
প্রতিরোধ করে।
৮.স্ট্রেস হ্রাস করতে পেঁপেঃ
সারাদিনের স্ট্রেস বা ক্লান্তি এক নিমিষে দূর করে দিতে পারে পেঁপে। এতে
থাকা ভিটামিন-সি স্ট্রেস হ্রাস করে। University of Alabama এর পরিচালিত এক
গবেষণা মতে প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত
যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। এটি আমরা পেঁপে থেকে খুব সহজেই
পেতে পারি।
৯.ব্রণ ও কালো দাগ তুলতে পেঁপেঃ
পাকা পেঁপে কালো দাগ দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পাকা এক
টুকরো পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ঘষে দিন। আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর
পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে করতে থাকেন। পেঁপেতে থাকা প্যাপিন
মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে তোলে।
১০.ক্যারোটিনের উৎস হিসেবে পেঁপেঃ
ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কাঁচা পেঁপেতে গাজর ও
টমেটোর চেয়েও অনেক বেশি ক্যারটিনয়েডস পাওয়া যায়। তাই এটি আমাদের শরীরের
ক্যারটিনয়েড ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে।
১১.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে পেঁপেঃ
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক-বিজ্ঞানী ডা. সুম্যান হেয়ায়াতি জানিয়েছেন,
খাবারের মাধ্যমে শরীর যদি পর্যাপ্ত পটাশিয়াম না পায় তাহলেও ব্লাড প্রেসার হাই
হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর রক্তে পটাশিয়াম সঠিক পরিমানে থাকাটা জরুরি। পটাশিয়ামের ঘাটতি
মেটাতে সেসব খাবার খেতে হবে যেগুলোয় সোডিয়াম কম, পটাশিয়াম বেশি। পেপে এর একটি
উত্তম উদাহরণ।
১২.চুলের যত্নে পেঁপেঃ
চুলের যত্নেও পেঁপে খুব উপকারী। যে কারণে বাজারে পেঁপে মেশানো শ্যাম্পুর
প্রচলন রয়েছে। টক দই ও পেঁপের মিশ্রণ চুলে মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুলের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। উল্লেখ্য যে, চুলে উঁকুনের
সমস্যাতেও পেঁপে ভীষণ উপকারি।
পেঁপের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। প্রতিদিন মুখে পেঁপে
লাগালে ত্বকের লাবণ্য এবং উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। এছাড়াও পাকা পেঁপে, মধু,
টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। সেই
সঙ্গে ত্বকের দাগ, ছোপ, বলিরেখা দূর হয়। ব্রণের সমস্যাও দূর হয়।
পেঁপে খাবার নিয়ম
পেঁপে খাবার নিয়ম নিয়ে আর্টিকেলের এ অংশে আলোচনা করা হবে। পেঁপে কাচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
*কাচা পেঁপে
টুকরো করে চিবিয়ে, সালাদের সাথে মিশিয়ে বা তরকারি হিসেবে রান্না করে খেতে
পারেন।
*পাকা পেপে সরাসরি কেটে, সালাদ হিসেবে বা রান্না করেও খাওয়া যায়।
*তবে পেঁপের কোন অংশকে ওষুধ হিসেবে ব্যাবহার করার পূর্বে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
*পেঁপে খেলে যদি কারো এলার্জির সমস্যা হয়, তবে পেঁপে না খাওয়াই উত্তম।
শেষ কথাঃ পেঁপের উপকারিতা । পেঁপে খাবার নিয়ম
আজকের আর্টিকেলে পেঁপে খাবার নিয়ম এবং পেঁপের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদি আজকের আলোচনা আপনাদের কোন কাজে
লেগে থাকে তবেই আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। এরকম আরো আর্টিকেল নিয়মিত পেতে
আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url