পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার । কোথায় অবস্থিত এবং কেন বিখ্যাত

 পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার (Paharpur Buddhist bihar) যা সোমপুর মহাবিহার (Sompur Mahabihara) নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার গুলির একটি। কেবল বাংলাদেশের নয়, হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালের অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধবিহার । আয়তনের দিক থেকে কেবল ভারতের নালন্দা'র সাথে এর তুলনা চলতে পারে। সোমপুর শব্দের অর্থ "চাঁদের শহর"। 


 আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এর অবস্থান, নির্মাণ, আবিস্কার, এবং বর্তমান অবস্থা। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমদের আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ুন।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। তবে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে এর দুরত্ব ৫ কি.মি.। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এর নির্মাণ ও নামকরণঃ

পাল বংশের ২য় সম্রাট ধর্মপাল  ৭৭০ থেকে ৮১০ সালের মধ্যে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নির্মান করেন। নির্মাণের সময় সে এলাকার নাম ছিল সোমপুর যার অর্থ "চাঁদের শহর"। যার কারনে এটি  সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত হয়। কিন্তু এর দাপ্তরিক বা আনুষ্ঠানিক নাম ছিল নির্মাতার নামে, "ধর্মপাল বৌদ্ধবিহার"। কালক্রমে  বৌদ্ধবিহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে এর উপর মাটি জমে পাহাড় আকৃতি ধারণ করে।  এখানে বৌদ্ধবিহার আবিস্কার হবার পূর্বে স্থানীয় লোকজন এই উচু জায়গাটিকে "গোপাল চিতার পাহাড়" বলে সম্বধন করত, যা থেকে এর নামকরণ হয় পাহাড়পুর। 

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এর ইতিহাসঃ

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এর ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রায় হাজার বছর পুরনো এর ঐতিহ্য। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান হতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে আসতেন। এখানে ধর্মশাস্ত্র, ভাষা, জ্যোতিবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হতো। এখানেই রচিত হয়েছিল বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন "চর্যাপদ"। প্রায় ৩০০ বছর এর বেশি সময় এটি টিকে ছিল। দ্বাদশ শতাব্দিতে পাল সাম্রাজ্যের পতন এবং সেন বংশের উত্থান এর মধ্যে দিয়ে এর স্বর্নযুগ শেষ হয়।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এবং খনন ঃ

আবিষ্কারঃ 
১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার খননের উদ্যোগ নেন এবং আবিষ্কার করেন যে এটি একটি বৌদ্ধবিহার । 
খননঃ 
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বকালীন সময়ে, মূলত ব্রিটিশ যুগে এবং দ্বিতীয়ত স্বাধীনতা-উত্তর কালে আশির দশকে। 
প্রথম খননের উদ্যোগটি নেন স্যার কানিংহাম ১৮৭৯ সালেএ খনন থেকে চারপাশে উঁচু অংশ বিশিষ্ট প্রায় ৭ মিটার উচ্চতার একটি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়।

 ১৯২৩ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র গবেষণা পরিষদ ও ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের যৌথ উদ্যগে এবং দিঘাপতিয়ার জমিদার পরিবারের সদস্য শরৎ কুমার রায়ের অর্থ সাহায্যে পুনরায় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে খননকাজ শুরু হয়।  এ  খননের ফলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এর উত্তর-দক্ষিণে বিন্যস্ত কক্ষের একটি সারি এবং চত্বরের কিছু অংশ  আবিস্কৃত হয়।
 
 ১৯২৫-২৬ সালে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরিচালিত খনন এর মাধ্যমে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কেন্দ্রীয় ঢিবির উত্তর দিকে প্রধান সিঁড়ি, পোড়ামাটির তৈরী ফলক চিত্র শোভিত প্রাচীর এবং উত্তর দিকের মন্ডপ বা হলরুম খুজে পাওয়া যায়। এ আবিস্কারের ফলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ভুমিপরিকল্পনা (Landscaping) এবং দেয়ালচিত্র ( Terracotta) সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। 
আরও পড়ুনঃ
১৯৩৩-৩৪ সালে কাশিনাথ দীক্ষিতের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পুনরায় খনন কাজ পরিচালনা করেন। এতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরের অবশিষ্ট অংশ এবং সত্যপীরের ভিটায় বেশ কয়েকটি স্তূপসহ একটি তারা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার হয়।
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৮১-৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অনুসন্ধান এবং ইতোপূর্বে কাশিনাথ দীক্ষিতের আবিষ্কৃত কক্ষসমূহের প্রাপ্ত নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের খনন কাজ শুরু করে। 
১৯৮৭-৮৯ সালে পুনরায় খনন পরিচালিত হয়

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪