দাদ কি । দাদ এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

পরিচিতিঃ দাদ কি । দাদ এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

 দাদ ( ভিন্ন উচ্চারণে দাউদ) ইংরেজিতে রিংওয়ার্ম (Ringworm) নামেও পরিচিত। তবে ইংরেজী নামের মধ্যে worm থাকলেও দাদ এর কারণ কোন "worm" বা কৃমি নয়, দাদ একটি ছত্রাক জনিত ত্বকের সংক্রমণ। দাদ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডার্মাটোফাইটোসিস (Dermatophytosis) এবং  "Tinea"  নামেও পরিচিত।
এটি খুবই সংক্রামক এবং খুব সহজেই একজন থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শিশু থেকে বয়ষ্ক যে কেউ দাদ এ আক্রান্ত হতে পারে। দাদ শরীরের যেকোনো অংশেই হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমাদের আলোচ্য বিষয় দাদ এর কারণ, লক্ষণ,চিকিৎসা ও প্রতিরোধ।

দাদ এর কারণ

দাদ একটি ছত্রাকজনিত অসুখ। সাধারণত তিন ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণে দাদ হতে পারে। এগুলো নিম্নরূপঃ-
  1. ট্রাইকোফাইটন- (Trichophyton গণ)
  2. এপিডার্মফাইটন (Epidermophyton গণ)
  3. মাইক্রোস্পোরাম (Microsporum গণ)

আবার শরীরের কোন অংশে দাদ হয়েছে তার উপর নির্ভর করে দাদ এর নাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ
  • টিনিয়া ক্রূরিস =কুঁচকির (groin) দাদ।
  • টিনিয়া ক্যাপাইটিস=মাথার ত্বকে দাদ।
  • টিনিয়া কর্পোরিস= শরীরের (trunk) যে কোন জায়গায় বা হাত পায়ে দাদ।
  • টিনিয়া পেডিস= পায়ের পাতায় দাদ  ( এটি "অ্যাথলেট'স ফুট" নামেও পরিচিত।
  • টিনিয়া আঙ্গুয়াম= নখে দাদ।
  •  টিনিয়া মানুম= হাতে দাদ।
দাদ অত্যন্ত সংক্রামক একটি ব্যাধি । নিচে উল্লেখিত কারণে একজন মানুষ দাদ এ আক্রান্ত হতে পারেন।
১. দাদ আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যাবহার করা জিনিস যেমন, গামছা, তয়ালে, চিরুনি ইত্যাদি সুস্থ ব্যাক্তি               ব্যাবহার    করলে তার দাদ এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। 
২. পোষা প্রানী থেকেও অনেক সময় দাদ সংক্রমন হয়ে থাকে। 
৩. স্যাতসেতে, বদ্ধ জায়গা যেখানে দাদ এর ছত্রাক থাকতে পারে সেখানে কাজ বা বসবাস করলে দাদ        হতে পারে।
৪. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন এইচ.আই.ভি. এইডস, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার এ আক্রান্ত , তারা সহজেই দাদ এ আক্রান্ত হতে পারেন।
৫. অপরিচ্ছন্ন কাপড় দীর্ঘসময় পরা।
৬. পরিধেয় কাপড় নিয়মিত ধুয়ে যথাযথভাবে না শুকানো।
৭.শরীর অতিরিক্ত ঘামের কারণে স্যাতসেতে হলে বা দীর্ঘ সময় আদ্র থাকলে দাদ এর ছত্রাক আক্রান্ত হতে পারে। ঘাম, দাদ এর জন্য দায়ী ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

দাদ এর লক্ষণ

সাধারণত দাদ হলে নিম্নলিখিত লক্ষনগুলি দেখা যায়ঃ

  • দাদ হলে সাধারণত আক্রান্ত স্থানে চামড়ার ওপর গোলাকার ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটি দেখতে অনেকটা চাকার মতো, যার কিনার সামান্য উঁচু হয়। যত দিন যায়, চাকার পরিধি তত বাড়তে থাকে। আর মাঝের দিকে ভালো হয়ে যেতে থাকে।
  • দাদ আক্রান্ত স্থানে কখনো কখনো খুশকি বা আইশের মতো চামড়া উঠে বা চামড়ায় ফাটা দাগ হয়। কখনো পানি ভর্তি বা পুঁজ ভর্তি দানা দেখা দিতে পারে।
  •  কোমরে বা কুঁচকিতে দাদ হলে সেখানকার ত্বক বিবর্ণ-সাদাটে ও মোটা হতে পারে।
  • নখে দাদ হলে নখ অস্বচ্ছ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
  •  দাদ চুলকালে সেখান থেকে রস পরতে পারে।
  •  দাদ আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হয়।
  •  দাদ আক্রান্ত স্থানে চুল বা লোম উঠে যেতে পারে।

দাদ এর চিকিৎসা

দাদ যেহেতু ছত্রাক জনিত সংক্রমন তাই সংক্রমন কম পরিমানে হলে এন্টি-ফাংগাল ক্রিম বা লোশন লাগালেই সেরে যায়। কিন্তু সংক্রমন বেশি হলে মুখে খাবার ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন দরকার হতে পারে। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা ব্যাবহার করা হয়।
ক্রিম ও লোশনঃ দাদ এর চিকিৎসায় ব্যাবহার হওয়া ক্রিম ও লোশনের মধ্যে রয়েছে  ক্লট্রিমাজোল, মাইকোনাজোল, টার্বিনাফিন ও কিটোকোনাজল। এগুলো সাধারণত ২–৪ সপ্তাহ একটানা ব্যবহার করতে হয়।
শ্যাম্পুঃ  দাদের চিকিৎসার জন্য সেলেনিয়াম সালফাইড বা ২% কিটোকোনাজোল মিশ্রিত এন্টি-ফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয়।
মুখে খাবার ওষুধঃ দাদ খুব বেশি ছড়িয়ে পরলে মুখে খাবার ওষূধ প্রয়োজন হতে পারে।

তবে দাদের বা যে কোন ওষুধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কারন ভুল ওষুধ ব্যাবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

দাদ এর প্রতিরোধ

দাদ যেহেতু ছত্রাক সংক্রমণ জনিত অসুখ তাই  কিছু অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দাদ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। যেগুলো নিম্নরূপঃ
১. দাদ আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখুন।
২. পরিস্কার, ঢিলেঢালা এবং শুকনো কাপড় সম্ভব হলে সুতি কাপড় এবং সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস পরুন। ৩. ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস অন্যকে  দিবেন না ,অন্যের ব্যবহার করা জিনিসপত্র  ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৪. দাদ আক্রান্ত স্থানে কোন সাধারণ তেল , প্রসাধনি ক্রিম, মেক আপ ,লোশন, কসমেটিক সাবান ও শ্যাম্পু  ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
৫. দাদ আক্রান্ত স্থান স্পর্শ না  করা। যদি  স্পর্শ করতে হয় তাহলে  ভালভাবে হাত ধুয়ে নেয়া, যাতে সংক্রমণ দেহের অন্য কোথাও না ছড়ায়।
৬.  দাদ আক্রান্ত জায়গাটা যত দূর সম্ভব খোলামেলা রাখতে হবে।
৭. প্রতিদিনের পরিহিত কাপড়চোপড়, গেঞ্জি, মোজা, আণ্ডারওয়্যার প্রতিদিন জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে  পরিষ্কার করতে হবে।
৮. দাদ আক্রান্ত স্থান উষ্ণ পানি ও ভালো মানের অ্যান্টিসেপ্টিক সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে এবং শুকিয়ে তারপর ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। ৯. পোষ্য-প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ১০. নিয়মিত হাটাচলা বা ব্যায়াম করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
১১. ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

শেষ কথা- দাদ এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি ,ছত্রাক জনিত রোগ দাদ এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে। যদি এই আর্টিকেলটি আপনাদের কোন উপকারে এসে থাকে এবং এর থেকে নতুন কিছু জানতে পেরে থাকেন তবেই আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪