চাশতের নামাজ । সময়, নিয়ম, কত রাকাত, নিয়ত এবং ফজিলত

পরিচিতিঃ চাশতের নামাজ । সময়, নিয়ম, কত রাকাত, নিয়ত এবং ফজিলত

 ইসলাম ধর্মে যে সকল নফল ইবাদাত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদা সম্পন্ন নফল ইবাদাত হচ্ছে চাশতের নামাজ। এ নামাজকে আরবিতে ‘সালাতুদ্ দোহা’ বলা হয়। দোহা আরবি শব্দ। বাংলায়  উচ্চারণ করা হয় 'জোহা'। ফারসি ভাষায় একে 'চাশতের নামাজ' বলা হয়।


 চাশতের নামাজ বা দোহার সালাত বা সালাতুত দোহা হলো ফজর ও জোহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ার জন্য নফল বা ঐচ্ছিক নামাজ। বিভিন্ন হাদিসে এই সালাতকে সালাতুল আওয়াবিন বা আল্লাহওয়ালাদের সালাত নামে ডাকা হয়েছে। মূলত ফজরের নামাজের পর থেকে জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত সময়ে আদায় করা নামাজকেই সালাতুদ দোহা বা চাশতের নামাজ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

চাশতের নামাজ এর সময় 

মূলত ফজরের পর থেকে জোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে আদায় করা সালাতকেই দোহা বা চাশত হিসেবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। চাশতের নামাজ বা সালাতুত দোহা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে সূর্যোদয় এবং জোহর নামাজের মধ্যবর্তী সময়। সূর্য এক-চতুর্থাংশ উপরে উঠলে, গ্রীষ্মকালে ৯টা-১০টা, আর শীতকালে ১০টা-১১টার সময় সাধারণত তা আদায় করা হয়। চাশতের নামাজ বা দুহার নামাজ আদায় করতে হয় সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ মুহূর্তে।

 ‘দুহা’ শব্দের অর্থ ‘প্রভাত সূর্যের ঔজ্জ্বল্য’, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। সুতরাং দুহা বা চাশতের নামাজ সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে বলা হয়েছে ‘চাশতের নামাজ পড়া হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।’ (মুসলিম-৭৪৮)। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন  চাশতের  নামাজ আদায় করা উত্তম। 

চাশতের নামাজ এর নিয়ম

চাশতের নামাজের নিয়ম সাধারণ নফল বা সুন্নত নামাজের মতো।  চাশতের নামাজ অন্য যেকোনো দুই রাকাত নফল বা সুন্নত নামাজ আদায়ের মতোই। সূরা ফাতিহা পাঠ করার পরে অন্য যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। শেষ বৈঠকে  আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।

চাশতের নামাজ কত রাকাত

চাশতের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়তে হয়। এ ছাড়া চার, আট ও বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।সবগুলির ব্যাপারেই হাদিসে বর্ণনা আছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলোঃ

 হযরত আলি (রাঃ) এর বোন উম্মে হানি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা:) মক্কা বিজয়ের দিন তার ঘরে চাশতের নামাজ  আট রাকাত  আদায় করেছেন। সিজদায় তিনি পূর্ণ স্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। (বুখারি-২০৭, মুসলিম, মিশকাত-১৩০৯)।

 
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা:) চার রাকাত চাশতের নামাজ পড়তেন এবং আল্লাহর তাওফিক অনুসারে আরো বেশি পড়তেন (আহমাদ, মুসলিম, মিশকাত-১৩১০)। 
আয়েশা (রা:) আট রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করতেন আর বলতেন, "যদি আমার মৃত মা-বাবাকে পুনঃজীবিত করে দেয়া হয়, তবুও আমি তা ছাড়ব না" (মিশকাত-১৩১৯)।


 আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ (সা:) সালাতুদ জোহা বা চাশতের নামাজ কয় রাকাত পড়তেন? জবাবে আয়েশা (রা:) বললেন, "তিনি জোহা বা চাশতের নামাজ সাধারণত চার রাকাত পড়তেনএবং অনেক সময় ইচ্ছামতো আরো বেশি পড়তেন" (সহিহ মুসলিম-১৫৪৮)।


 হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু যর (রা.)-কে বলেছেন, "তুমি যদি চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়ো, তাহলে তোমাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আর যদি চার রাকাত পড়ো, তাহলে তুমি নেককার মধ্যে গণ্য হবে।

আর যদি আট রাকাত পড়ো, তবে সফলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর যদি দশ রাকাত পড়ো তাহলে কেয়ামত দিবসে তোমার কোনো গুনাহ থাকবে না। আর যদি বারো রাকাত পড়ো, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্বর্ণের বাড়ি তৈরি করবেন।" (সুনানে কুবরা লিল-বাইহাকী, পৃষ্ঠা : ৩/৪৮)


চাশতের নামাজ এর নিয়ত

চাশতের নামাজের নিয়ত নিম্নে দেয়া হলোঃ

বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিদ্দোহা রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাআ'বাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’।

অর্থ : আমি কেবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত দুহা(জোহা) সালাত/ চাশতের নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম ‘আল্লাহু আকবার’ ।



চাশতের নামাজ এর ফজিলত

চাশতের নামাজ অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ এবং বরকতময়। নিম্নে বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের সূত্রের আলোকে চাশতের নামাজ এর ফজিলত আলোচনা করা হলোঃ

১. মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি চাশতের নামাজের দুই রাকাতের প্রতি যত্নবান হলো, তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)"

২. আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি চাশতের নামাজ ১২ রাকাত  আদায় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি স্বর্ণের ঘর নির্মাণ করবেন। ’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

৩.আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, "আমার প্রিয়তম রাসুল (সা.) আমাকে তিনটি ব্যাপারে ওসিয়ত করেছেন, যেন আমি সেগুলো আমৃত্যু না ছাড়ি। এগুলো হলো প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, চাশতের নামাজ আদায় করা  ও ঘুমানোর আগে বিতরের সালাত আদায় করা।’"(সহিহ বুখারি: ১১৭৮)

৪. হযরত বুরাইদাহ্‌ (রা.) হতে বর্ণিত, "আমি আল্লাহর রসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, "মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের উচিত হচ্ছে প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল ( সা.)! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, দুই রাকাত চাশতের নামাজ এর জন্য যথেষ্ট'।" (আবু দাউদ: ৫২২২)

৫. হযরত আবু উমামা কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল ( সা.) বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহ থেকে ওযূ করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্‌রাম বাঁধা হাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা  ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (
সুনান আবূদাঊদ, সহিহ তারগিব নং ৩১৫)

শেষ কথাঃ চাশতের নামাজ 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ছিলো চাশতের নামাজ এবং এর সময়, নিয়ম, কত রাকাত এবং চাশতের নামাজ এর ফজিলত সম্পর্কে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে চাশতের নামাজ সম্পর্কে পূর্নাংগ ধারণা পেয়েছেন। এরকম আরো লিখা পাবার জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের সাইট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Jeon
    Jeon ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এ ১১:৩৭ PM

    জাজাকাল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে চাশতের নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪