ভূমিকাঃ লালবাগ কেল্লা । অবস্থান, ইতিহাস এবং কেন বিখ্যাত
ঢাকার ঐতিহাসিক মুঘল স্থাপনা সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লালবাগ কেল্লা
(Lalbagh Fort)। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এ এক অবশ্য দ্রষ্টব্য গন্তব্য। লালবাগ
কেল্লার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নির্মাণে একই সাথে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর
এবং পোড়ামাটির টালি ব্যাবহার হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রাপ্ত অন্য কোন স্থাপনায়
দুর্লভ।
যদিও লালবাগ কেল্লা একটি অসমাপ্ত স্থাপনা, তবুও মানুষের কাছে এর
আকর্ষণ অনতিক্রম্য। ইতিহাস ও প্রাচীন স্থাপনার সৌন্দর্যের টানে এখানে মানুষের ভীড়
লেগেই থাকে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লালবাগ কেল্লা । অবস্থান, ইতিহাস এবং কেন বিখ্যাত
লালবাগ কেল্লার অবস্থান
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লা কেন বিখ্যাত
লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময়সূচি ও টিকেট মূল্য
শেষ কথা
লালবাগ কেল্লা এর অবস্থান
লালবাগ কেল্লা রাজধানীর ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বুড়িগংগা নদীর তীরে অবস্থিত।
লালবাগ কেল্লা যে এলাকায় অবস্থিত অর্থাৎ লালবাগ এর নামানুসারেই এই কেল্লার নাম
লালবাগ কেল্লা। আগে এটি একদম নদীর কিনারায় অবস্থিত ছিলো। তবে এখন নদী বেশ কিছুটা দূরে সরে গেছে।
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লা নির্মিত হয়েছিল ঢাকায় বাংলা সুবা বা প্রদেশের গভর্নর বা সুবেদারের বাসভবন এবং বুড়িগংগার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জলপথ পাহাড়া দেয়া এবং এ অঞ্চলের মানুষকে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দূর্গ হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য। এর নির্মাণ ইতিহাসকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
প্রথম দফার নির্মাণঃ
লালবাগ কেল্লা নির্মানের শুরু ১৬৭৮ সালে। নির্মাণ কাজ শুরু করেন মুঘল সম্রাট আওরংগজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম শাহ, যিনি সে সময়
বাংলার মুঘল সুবেদার ছিলেন। লালবাগ কেল্লা নির্মাণের শুরুর দিকে এর
নাম ছিলো সম্রাট আওরংগজেবের নামে "কিল্লা আওরংগবাদ"। কিন্তু লালবাগ কেল্লা নির্মাণ
শেষ না হতেই মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তাকে দিল্লি ফিরতে হয়। ফলে নির্মাণ
কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। এসময় কেবল দরবার হল এবং মসজিদ নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছিলো।
১৬৮০ সালে শায়েস্তা খাঁ বাংলার সুবেদার হিসেবে
আসেন এবং লালবাগ কেল্লা পুনরায় নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু ১৬৮৪ সালে নির্মাণ কাজ
শেষ হবার পূর্বেই আবার নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কথিত আছে, শায়েস্তা খাঁর
কন্যা ইরানদুখতরাহমাতবানু ওরফেপরীবিবির মৃত্যুতে শায়েস্তা খাঁ এটিকে অপয়া ভাবতে শুরু করেন এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
পরি বিবিকে লালবাগ কেল্লার ভেতরেই দাফন করা হয়। এবং সমাধির উপরে সমাধি সৌধ তৈরী
করা হয়। লালবাগ কেল্লার যে ছবিটি বেশি বিখ্যাত তা এই সমাধি সৌধেরই।
এছাড়া বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ স্থানান্তর করায় লালবাগ
কেল্লা গুরুত্ব হারায়। ঐতিহাসিক গন এটিকেই লালবাগ কেল্লা নির্মান বন্ধের মূল
কারণ হিসেবে গণ্য করেন।
মুঘল আমল সমাপ্ত হবার পরে লালবাগ কেল্লা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
লালবাগ কেল্লা কেন বিখ্যাত
লালবাগ কেল্লা মূলত তার ঐতিহাসিক ভবনগুলোর জন্য বিখ্যাত। সাধারণভাবে লালবাগ
কেল্লার প্রধান তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। এগুলো হচ্ছেঃ-
১. তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
২.পরি বিবির সমাধি।
৩. দেওয়ান-ই- আম।
তবে সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খনন এবং অনুসন্ধানের ফলে আরো কিছু অবকাঠামোর
অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
লালবাগ কেল্লার মূল স্থাপনাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
১. তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ
শাহজাদা আজম শাহ এর সুবেদারির সময় (১৬৭৮-১৬৭৯) এই মসজিদ নির্মান
করা হয়। আয়তাকার এই মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ। বর্তমানেও এটি
মসজিদ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে।
২.পরি বিবির সমাধিঃ
লালবাগকেল্লারতিনটিস্থাপনারমধ্যেঅন্যতমএটি।এখানেপরীবিবিসমাহিতআছেন।শায়েস্তাখানতারকন্যারস্মরণেএইমনমুগ্ধকরসমাধিটিনির্মাণকরেন।লালবাগকেল্লারতিনটিবিশালদরজারমধ্যে একটি মাত্রবর্তমানেজনসাধারণেরজন্যেউন্মুক্ত।এইদরজাদিয়েঢুকলেবরাবরসোজাচোখেপড়েপরিবিবিরসমাধি।আসলে
"লালবাগকেল্লা" বলতেযেইছবিটিবেশিপরিচিতবা বিখ্যতসেটিমূলত এইপরীবিবিরসমাধিরছবি। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এতে পরি বানুর মৃতদেহ নেই।
৩. দেওয়ান-ই- আমঃ
লালবাগকেল্লারপ্রাণকেন্দ্রদিওয়ান-ই-আমনামেরদরবারহল।ভবনেরনিচতলাব্যবহারহতো সুবেদারশায়েস্তাখাঁ’রবাসভবনহিসেবেএবংদ্বিতীয়তলাথেকেতখনকারসকলবিচারকার্যপরিচালনাকরাহতো। এটি হাম্মামখানানামেও পরিচিত, কারণ এখানে রাজপরিবারের সদস্যদের গোসলের ব্যাবস্থা
ছিলো।
লালবাগকেল্লায়প্রবেশেরজন্যটিকিটকাউন্টারথেকেপ্রবেশটিকিটসংগ্রহকরতেহয়। টিকেট কাউন্টার, প্রবেশ পথের ঠিক পাশেই অবস্থিত।বাংলাদেশীনাগরিকদেরজন্যজনপ্রতিটিকিটমূল্য২০টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকাএবং অন্যান্যবিদেশীনাগরিকদেরটিকিটের মূল্য২০০টাকা। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য ৫
টাকা। পাঁচবছরেরনিচেছোটবাচ্চাদেরটিকিটেরপ্রয়োজননেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃলালবাগকেল্লায় কোন ধরনের খেলার সামগ্রি বা খাদ্যদ্রব্য আনা যাবে না।
শেষ কথা। লালবাগকেল্লা
লালবাগকেল্লা নিয়ে ছিলো আমাদের আজকের এই পোস্ট। আশা করি পোস্টটি আপনাদের
ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি যদি আপনাদের কোন কাজে লেগে থাকে তবেই আমাদের
পরিশ্রম স্বার্থক হবে। আর নতুন কিছু জানতে চাইলে জানান কমেন্ট
সেকশনে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url