কিসমিসের উপকারিতা। কিসমিস খাবার নিয়ম

পরিচিতিঃ কিসমিসের উপকারিতা। কিসমিস খাবার নিয়ম 

কিসমিস (ভিন্ন বানানে কিশমিশ) হলো শুকনো আঙ্গুর। এটিকে ইংরেজিতে "Raisin" বলা হয়। বহু কাল থেকে কিসমিস একটি উপাদেয় এবং উপকারি খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত।  কিসমিস সরাসরি শুকনো ফল বা মিক্সড ফ্রূট হিসেবে, পানিতে ভিজিয়ে বা রান্না করা খাদ্যের উপকরণ হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।

ফিচার ইমেজ ক্রেডিটঃ pixabay
কিসমিসের রয়েছে অসংখ্য গুনাগুন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় এই কিসমিস। আশা করি কিসমিসের উপকারিতা  এবং কিসমিস খাবার নিয়ম জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কিসমিসের উপকারিতা

কিসমিস একটি বহুমাত্রিক গুনসম্পন্ন খাবার। কিশমিশে ওজন অনুসারে ৭২% শর্করা থাকতে পারে। যার বেশিরভাগ ফ্রূক্টোজ এবং গ্লূকোজ। কিসমিসে প্রায় ৩% প্রোটিন এবং ৩.৭% – ৬.৮% ডায়েটা্রি ফাইবার বা খাদ্য আশ রয়েছে।আছে পটাসিয়াম, আয়রন, কপার, বোরন ও ক্যালসিয়াম। আরোও আছে ভিটামিন বি-৬ । কিসমিস এর বিভিন্ন উপকারি দিকগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১ .রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে কিসমিসঃ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি কিসমিস। কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। কিসমিস শরীরের সোডিয়াম এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমাতে রাখতে সাহায্য করে।

২. কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম কিসমিসঃ

কিসমিস একটি ফাইবার বা আশ সমৃদ্ধ খাদ্য। ফলে কিসমিস   শরীরের পরিপাক ক্রিয়া দ্রুততর করে খাবার সহজে হজম করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর উপশম করে। কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করার জন্য প্রতিদিন সকালে  কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। 

৩. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় কিসমিসঃ

কিসমিসে পাওয়া যায় হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার এক অপরিহার্য উপাদান, ক্যালসিয়াম; যা হাড় ও দাঁতের জন্য খুব প্রয়োজন। এছাড়াও, বোরন নামক এক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও কিসমিসে থাকে যা সঠিক ভাবে হাড় গঠনে সহায়তা করে এবং ক্যালসিয়ামের সঠিক শোষণে শরীরকে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ পেপের উপকারিতা এবং পেঁপে  খাবার নিয়ম

 মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট শরীরে খুব অল্প পরিমাণে দরকার বলেই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কিন্তু শরীরে এর উপস্থিতির গুরুত্ব অসীম। তাই বোরন মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ ঘটে যাওয়া নারীদের মধ্যে অস্টিয়োপোরসিস এবং হাড় ও বাতের ব্যথা প্রতিরোধ এবং হাড়ের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির জন্য খুব উপকারী। 

৪. স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বাড়াতে কিসমিসঃ

যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর উপায় হচ্ছে কিসমিস। এতে প্রচুর গ্লূকোজ ও ফ্রূক্টোজ থাকায় তা ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।

৫. ক্যান্সার নিরাময়ে কিসমিসঃ

কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও ক্যাটেচিন নামক একটি পলিফেনলিক অ্যাসিড। এগুলো শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলো ধ্বংস করে এবং ক্যান্সারের কোষগুলো উৎপাদন হওয়া আটকায়। আবারে কিসমিসে বিদ্যমান আঁশ কোলোরেক্টারাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন কিসমিস খেলে শরীরে ক্যাটেচিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায়। 

৬. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কিসমিসঃ

ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি কিসমিসে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং পলিফেনলসের মতো পুষ্টি উপাদান। এগুলো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বডি সেলসকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি কিসমিস শরীরকে দুষণমুক্ত রাখে। 

৭. ডায়বেটিস ও স্থুলতা প্রতিরোধঃ

লাঞ্চ বা ডিনারের পরে শরীরে ইনসুলিনের যে ওঠানামা হয়, কিসমিস খেলে সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে ডায়বেটিসও নিয়ন্ত্রণে  থাকে । কিসমিস শরীরে লেপটিন এবং ঘ্রেলিন নামক দুটি হরমোন রিলিজ করতে সাহায্য করে। 

আরও পড়ুনঃ আখরোট খাবার নিয়ম এবং উপকারিতা। 

এই হরমোনগুলো শরীরে সিগনাল পাঠায় খাওয়ার রুটিন ও পরিমাণ সম্পর্কে। ফলে যখন তখন ইচ্ছামতো খাওয়ার তাগিদ থাকে না এবং ওজন বাড়ে না। তবে আপনার আগে থেকে ডায়বেটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিসমিস খাবেন না। কারণ এর প্রাকৃতিক শর্করা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণহীন করে তুলতে পারে। 

৮. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি্তে কিসমিসঃ 

কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন, এবং এ-ক্যারোটিনয়েড চোখের ফ্রি র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় না, চোখে ছানি পড়ে না, এবং চোখের চারপাশে বলিরেখা তৈরি হয় না। এক কথায়, কিসমিস চোখের জন্য একটি আদর্শ খাবার।

৯. জ্বরের নিরাময়ে কিসমিসঃ 

কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে ফেনল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। এগুলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে। ফলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে হওয়া জ্বর দেহে বাসা বাঁধতে পারে না। 

১০. সংক্রমণ প্রতিরোধে কিসমিসঃ

কিসমিসে বিদ্যমান বিভিন্ন পলিফেনল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্ষত থেকে সংক্রমণ হওয়া প্রতিরোধ করে।

১১. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় কিসমিসঃ 

ক্যালসিয়াম এবং অলিওনেলিক অ্যাসিডে পরিপূর্ণ কিসমিস দাঁত শক্ত ও সুগঠিত করে, এনামেল গঠন করে, দাঁতের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোধ করে। মুখের ভেতরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ঘাঁটি গাড়তে পারে না। ছোট বাচ্চারা চকোলেট খেতে বেশি পছন্দ করে, তাই তাদের দাঁত ও মাড়ি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদেরকে নিয়মিত কিসমিস খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। 

১২. মস্তিষ্কের উন্নতি ও প্রশান্তি আনয়নে কিসমিসঃ

কিসমিসে থাকা বোরন যেমন হাড়ের সুগঠন করে তেমনি মনোযোগ বাড়ায়। বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেইন ডেভলপমেন্টের সময় কিসমিস খেতে দেয়া উচিত। এতে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে। এছাড়াও কিসমিসে যে আয়রন রয়েছে তা মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনে, মানসিক চাপ কমায়, অবসাদগ্রস্ততা কমায়, এবং মনমেজাজ প্রফুল্ল রাখে। শুধু তাই নয়, ঘুমের সমস্যা কাটাতে কিসমিস জাদুর মতো কাজ করে। 

১৩. অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা  প্রতিরোধে কিসমিস : কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া কমাতে সরাসরি সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্গত বেশ কিছু ভিটামিন এতে পাওয়া যায়, যা নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। কিসমিসে কপারও থাকে যা লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।

ছবি ক্রেডিটঃ pixabay 


কিসমিস খাবার নিয়ম

কিসমিস খাবার সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে নিচের নিয়মগুলো মেনে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়ঃ-
  1. শুকনো কিসমিস খাওয়ার চাইতে ভেজানো কিসমিস খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। তবে শুকনো অবস্থায়  যে খাওয়া যাবে না তা নয়। তবে প্রতিবার খাবার আগে অবশ্যই ধুয়ে নিবেন। 
  2. বিশেষজ্ঞদের মতে, কিসমিসের পুষ্টিগুণ ষোল আনা পেতে চাইলে সারারাত ভিজিয়ে রেখে খাওয়া উচিত। ১ কাপ পানিতে ৮-১০ টি কিসমিস ভালো করে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এর রং অনেক গাঢ় দেখাবে। যত গাঢ় হবে তত ভালো পুষ্টি উপাদান কাজ করবে। সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিসগুলো খাবেন। 
  3. কিসমিস ভেজানো পানিটা  ফেলবেন না ৷ সারারাত ভিজিয়ে রাখার ফলে পানিতেও কিসমিসের বেশ কিছু পুষ্টিগুণ মিশে যায়। পানিটা হালকা আঁচে একটু গরম করে খালি পেটে খেয়ে নিন। কিসমিস ও কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার আধা ঘন্টা পরে অন্য খাবার খাবেন।
  4. এছাড়া বিভিন্ন খাদ্য যেমন, পোলাও, জর্দা, ফিরনি, পায়েস ইত্যাদিতে সরাসরি দিয়ে খাওয়া যায়। কিসমিস যোগ করলে যেমন এসব খাবারের স্বাদ বাড়ে তেমনি পুষ্টিগুনও বৃদ্ধি পায় বহুগুনে।

শেষ কথা - কিসমিসের উপকারিতা। কিসমিস খাবার নিয়ম

কিসমিস অত্যন্ত উপকারি খাবার।আজকের আর্টিকেল পড়ে আমরা  কিসমিস এর উপকারিতা এবং কিসমিস খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারলাম। যদি এই আর্টিকেল আপনাদের কোন কাজে লাগে তবেই আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। আর কি বিষয়ে আপনারা পোস্ট বা আর্টিকেল চান তা জানান কমেন্ট সেকশনে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪