জমজম কূপ । জমজম কূপের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং উপকারিতা
SJM SHAHIN
২১ আগ, ২০২৩
পরিচিতিঃ জমজম কূপ । জমজম কূপের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং উপকারিতা
জমজমকূপ পৃথিবীতেআল্লাহতাআলারএকবিস্ময়করনিদর্শনেরনাম। পৃথিবীর সকল মুসলিমদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ এক স্থানে হচ্ছে এই জমজম
কূপ। পবিত্রতা, প্রাণময়তা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে
উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও কল্যাণকর পানি জমজমের পানি। এ পানি ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য এবং রোগির জন্য শেফাস্বরুপ।' (ইবনে মাজাহ)
জমজম কূপ (আরবি ভাষায়: "زمزم") হল সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদুল
হারামের ভেতরে অবস্থিত একটি পানির কুয়া। এটি কাবা ঘর থেকে প্রায় ১৯ মিটার পূর্বে অবস্থিত।
জমজম কূপের ইতিহাস
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং অদ্যবধি চালু থাকা পানির কূপের একটি হচ্ছে
জমজম কূপ। প্রায় পাঁচহাজারবছর ধরেএখান থেকেএকটানাপানিপাওয়াযাচ্ছে, একারণেজমজম কূপকে বিশ্বের প্রাচীনতম সক্রিয় কূপ মনে করা হয় (বুখারি৩৩৬৪,সাঈদইবনেজুবাইর (রাঃ) হতেবর্ণিত)।
জমজম কূপের উৎপত্তিঃ
জমজম কূপের উৎপত্তির সময় তখন ছিলো হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নবুয়তকাল। মহান আল্লাহ একের পর এক কঠিন
পরীক্ষা নিচ্ছেন তাঁর, আর ইবরাহিম (আ.)-ও খুব সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হচ্ছেন।
হজরত ইসমাইল (আ.)-এর জন্মের কিছুদিন পর আরেকটি শক্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হলেন
ইবরাহিম (আ.)।
আল্লাহর তরফ থেকে নির্দেশ আসে, প্রিয় সন্তান ও স্ত্রী হাজেরা (আ.)-কে মক্কার
জনশূন্য মক্কার ফারান পাহাড়ের পাদদেশে নির্বাসন দেয়ার। আল্লাহর নির্দেশ পালনে তিনি তাদেরকে আরবের সেই জনশূন্য প্রান্তরে নিয়ে গেলেন।
মক্কা তখন ধু ধু মরীচিকাময় এক ভীতিপ্রদ উপত্যকা। তাদের সেখানে রেখে ফিরে যাবার
সময় হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন,
"হে আমার রব, আমি আমার বংশধরকে ঊষর উপত্যকায় তোমার ঘরের কাছে বসবাস
করালাম;যাতে তারা নামাজ কায়েম করে। সুতরাং কিছু লোকের হৃদয়কে তাদের প্রতি
অনুরাগি করে দাও এবং তাদের জীবিকার ব্যাবস্থা করে দাও, যাতে তারা কৃতজ্ঞ থাকে"
- (সূরা ইবরাহিম - ৩৭) ।
এমন অঞ্চলে বাস করা একা একজন নারীর জন্য খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো।
তপ্ত মরুভূমিতে একসময় মা হাজেরা ও শিশু ইসমাইলের খাদ্য ও পানীয় শেষ হয়ে
যায়। এক ফোঁটা পানির আশায় এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলেন। সাফা পাহাড়ের মরীচিকাকে
পানির নহর মনে করে দৌড়ে গেলেন সেখানে। কিন্তু দেখলেন, তপ্ত বালুকাময় প্রান্তর
ছাড়া কিছুই নেই। একই আশা নিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে গেলেন মারওয়া পাহাড়ে, সেখানেও
পানি নেই।
এভাবে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফায় সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন।
দৌড়াদৌড়ির সপ্তম বা শেষ বার তিনি লক্ষ্য করলেন, শিশু ইসমাইলের পায়ের নিচে তার
পায়ের আঘাতে গর্ত হয়ে পানির ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। অন্য আরেক বর্ণনা অনুযায়ী
ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আঃ) এর পা অথবা ডানার আঘাতে জমজম কূপের উৎপত্তি।
জমজম কূপের নামকরণঃ
হাজেরা (আ.) জমজম কূপের পানিকে থামার নির্দেশ দিয়ে হিব্রু ভাষায় উচ্চৈঃস্বরে বলছিলেন ‘জমজম’ অর্থাৎ থেমে যাও। আল্লাহর ইচ্ছায় তা
নির্দিষ্ট স্থানে থেমে গেলো। হজরত হাজেরা(আঃ) উচ্চারিত সেই হিব্রু শব্দ থেকেই এ
কূপের নাম হয়ে যায় ‘জমজম কূপ’। য়াবার কিছু আরব ইতিহাসবিদের মতে, "জমজম" শব্দের অর্থ অধিক হওয়া বা আধিক্য। এখানে পানির আধিক্যর কারনে নাম
হয়েছে জমজম কূপ।
চলেযাওয়ারআগেজুরহামগোত্রেরলোকেরাকুয়াটিমাটিদিয়েভরাটকরেদেয়।সাড়ে৪০০বছরএভাবেইপড়েথাকেজমজমকূপ।৫৭০সালেআবদুলমুত্তালিব্স্বপ্নে জমজম কূপের অবস্থান জানতে পারেন এবংছেলেহারেসকেসঙ্গেনিয়েজমজমকূপের পূনঃ খননকরেন।
পরবর্তিতে জমজম কূপের একাধিক বার সংস্কার ও খনন কাজ করা
হয়।
প্রথমদিকে জমজম কূপ কেবল বালি ও পাথর দ্বারা ঘেরা ছিলো।
৭৭১ সালে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের সময় এর গম্বুজ এবং মার্বেল টাইলস লাগানো হয়।
৭৭৫ সালে খলিফা আল মাহদি সেগুন কাঠের গম্বুজ দ্বারা সংস্কার করেন।
৮৩৫ সালে খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহ গম্বুজটি মার্বেল পাথর দ্বারা প্রতিস্থাপন
করেন।
১৪১৭ সালে মামলুকদের সময়ে গম্বুজটি আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়।
১৯১৫ সালে ওসমানিয় সুলতান আব্দুল হামিদ জমজম কূপের আধুনিকায়ন
করেন। তিনি জমজম কূপের কাছে অবস্থিত সব বাড়ি-ঘর সরিয়ে তাওয়াফ করার স্থানের বাইরে নিয়ে
যান।
সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন সউদের সময়
জমজম কূপের দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে পানির কল বসানো হয়।
সর্বশেষ ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সৌদি বাদশাহ জমজম কূপের সংস্কার করেন।
বর্তমানে জমজম কূপ ভূগর্ভস্থ অবস্থায় বা বেসমেন্ট এ রাখা হয়েছে। এখান থেকে
পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলন করা হয় এবং মসজিদুল হারামের বিভিন্ন স্থানে
তা সরবরাহ করা হয়।
জমজম কূপের গুরুত্ব এবং উপকারিতা
কাবা গৃহের ইতিহাস এবং জমজম কূপ একটি অন্যটির সাথে গুরুত্ব পূর্ন ভাবে
জড়িত। জমজম কূপ পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্রতম, বরকতময় কূপ। এর পানি পৃথিবীর সর্বোত্তম
ও সুস্বাদু পানি। নিম্নে জমজম কূপের গুরুত্ব এবং উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ-
১. জমজমের পানি শুধু তৃষ্ণা মেটায় না। সাথে ক্ষুধাও নিবারণ করে।হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
‘জমজমের পানি বরকতময়, স্বাদ অন্বেষণকারীর খাদ্য’ (সহিহ মুসলিম: ২৪৭৩)।
২.জমজম কূপের পানি যে নিয়তে বা নেক উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হয়।জাবির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে। ’ (সুনানে ইবনে
মাজাহ: ৩০৬২)
আজকের আর্টিকেল থেকে আশা করি আমরা জমজম কূপের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং
উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আল্লাহর পবিত্র
ঘর কাবা শরিফ এবং জমজম কূপ দেখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url