খুশকি । কারন এবং দূর করার উপায়

 খুশকি (বা ইংরেজিতে Dandruff)  এর  সমস্যায় ভুগেনি এমন ব্যাক্তি পাওয়া মুশকিল। চুলের অত্যন্ত সাধারন এবং বিব্রতকর এক সমস্যার নাম খুশকি। সাধারণত শীত ও বর্ষাকালে খুশকির সমস্যা বেশি দেখা দেয় । তবে কারো কারো সারা বছর এই সমস্যা দেখা যায়।

ফিচার ইমেজ ক্রেডিটঃ Adobe Stock

খুশকি সাধারণত মাথার ত্বকে বেশি হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা খুশকি কি, হবার কারন এবং দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। তাই খুশকি কি, হবার কারন এবং তা দূর করার উপায় জানতে আমাদের পূরো আর্টিকেলটি পড়ুন। তবে তার আগে জেনে নেই খুশকি কি?

খুশকি কি?

খুশকি হচ্ছে ত্বকের এক প্রকার অসুখ বা সংক্রমণ। এর ফলে মাথার ত্বকের চামড়া আশের বা ফাইবার এর মত হয়ে উঠে আসে। তবে অন্যান্য কারনেও এটি দেখা দিতে পারে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (NHS) ভাষ্য মতে, "খুশকির কারণে মাথার চামড়ায় সাদা রংয়ের আস্তরণ পড়ে, যা শুষ্ক হয়ে তালু থেকে উঠে আসে। সাদা রঙ এর  হওয়ায় চুলে বিশেষ করে কালো চুলে খুশকি বেশি দেখা যায়।" 

খুশকির প্রকারভেদঃ

সাধারণত খুশকি দুই প্রকার, যথাঃ
  • শুষ্ক খুশকি
  • তৈলাক্ত খুশকি
শুষ্ক খুশকি সাধারনত মাথার ত্বক হতে ঝরে ঝরে পড়ে। অপরদিকে তৈলাক্ত খুশকি মাথার ত্বকে এবং চুলে আঠালোভাবে লেগে থাকে।

খুশকির কারণঃ

খুশকির অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কারনগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  • ছত্রাক সংক্রমণঃ সাধারণত মাথার ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণের ফলে খুশকি দেখা যায়। বা বলা যায় ছত্রাক সংক্রমণই খুশকির প্রধান কারন। সাধারণত ম্যালাসেজিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমনে খুশকি দেখা দেয়।
  • ময়লা ঃচুলে ময়লা জমলে বা নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে চুলে খুশকি হতে পারে। যারা বাইরে বা ধুলাবালিতে চলাফেরা করেন এবং নিয়মিত মাথা পরিষ্কার করেন না তাদের খুশকি হতে পারে।
  • এলার্জিক প্রতিক্রিয়াঃকারো কারো নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য, পরিবেশগত উপাদান বা কোন রাসায়নিক এর উপস্থিতিতে খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেঃগবেষকদের মতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে খুশকি দেখা দিতে পারে। আবার অন্যান্য কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও খুশকি দেখা দেয়।
  • বংশগত কারণঃ কিছু মানুষের বংশগত কারনেও খুশকি দেখা দেয়।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. আফসানা নাহিদ বলেন, "বংশগতভাবে খুশকি হতে পারে"
  • ঠান্ডা আবহাওয়াঃআমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলোজি অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে,  "অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়াও খুশকির অন্যতম কারণ।"
  • চর্মরোগঃ ত্বকের সমস্যা বা চর্মরোগও খুশকির একটি প্রধান কারন। যেমন- সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন বা সংক্রমণ খুশকির  কারন হতে পারে।
  • খাদ্যাভাসের কারনেঃ সঠিক খাদ্যাভ্যাস না থাকা বা খাবারের উপাদান সমূহ ভারসাম্য পুর্ণ না থাকাও খুশকির একটি  কারন। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমানে জিংক বা ভিটামিন বি না থাকে তবে খুশকি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণও খুশকির কারন।
  • পানির সমস্যাঃ পানির সমস্যার ফলেও খুশকি দেখা দিতে পারে। পানিতে অতিরিক্ত ক্লোরিন বা অন্যান্য রাসায়নিক এর উপস্থিতি খুশকির কারন হতে পারে।

খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি দূর করার  জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেয়া যেতে পারেঃ

১. নিম এর ব্যবহারঃ নিমে রয়েছে এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি মাইক্রবিয়াল গুনাগুন, যা খুশকি দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। ‘ব্রাজিলিয়ান জার্নাল অব মাইক্রোবায়লজি’তেও নিমের এই অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।                                                                                                 খুশকি দূর করার জন্য কয়েকটি শুকনো নিম পাতা ভালো করে গুঁড়া করে নিন। এর সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই পেস্ট আপনার মাথার ত্বকে  ও চুলের গোড়ায় খুব ভালো করে লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ১-২ দিন নিমের হেয়ার মাস্ক চুলে ব্যবহার করলেই খুশকি দুর হবে।

আরও পড়ুনঃ নিমের ব্যাবহারবিধি ও উপকারিতা 

নিম ব্যাবহারের আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, একমুঠো নিমপাতা ৪ কাপ পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে নিন। এই পানি দিয়ে মাথা ও চুল ধুয়ে নিন। 
২.পেঁয়াজের রস: দুটো পেঁয়াজ ভাল করে বেটে এক মগ পানিতে মিশিয়ে, মাথায় এই রস ভাল করে লাগিয়ে মালিশ করুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার পেঁয়াজের রস মাথায় মাখলে দ্রুত খুশকি  দূর করা যাবে।
৩.আমলকিঃ আমলকির রয়েছে বিবিধ ভেষজ ব্যাবহার। খুশকি দূর করতেও এর জুড়ি নেই। খুশকি দূর করতে আমলকি পাউডার ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে স্ক্যাল্পে লাগান। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। অথবা ২-৩ টি আমলকি পেস্ট করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে নিন। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার এই নিয়মে লাগালেই খুশকি দূর হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ আমলকি এর উপকারিতা এবং ব্যাবহার
৪.এলোভেরাঃ খুশকির জন্য এলোভেরার বা ঘৃতকুমারির রস বা জেলও খুব উপকারি। এলোভেরার রস ব্যাবহার করেও খুশকি দূর করা যায়।
৫.টক দইঃ খুশকি দূর করতে আরেক মহৌষধ হচ্ছে টক দই। এক কাপ টক দই এর সাথে এককাপ পানি মিশিয়ে মাথায় রেখে দশ মিনিট পরে শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । পরের দিন শ্যাম্পু করে ফেলুন। খুশকি দূর হয়ে যাবে।
৬.মেথিঃ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে বেটে তার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে এবং চুলের গোঁড়ায় মাথার ত্বকে ভালো করে লাগান। মেথি ছেঁকে নেয়া পানি ফেলে ্দিবেন না। ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন।  চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে আরো একবার চুল ধুয়ে নিন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার মেথি ব্যাবহার করুন। খুশকি দূর করতে এর জুড়ি নেই। 
৭.রিঠাঃ চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে যেমন রিঠার জুরি মেলা ভার তেমনি খুশকির সমস্যা দুর করতেও এটি বেশ কার্যকর। রিঠা পাউডার ও পানির পেস্ট বা রিঠা সিদ্ধ পানি চুলের ত্বকে লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে ভালমতো ধুয়ে ফেলুন। এ ভাবে সপ্তাহে দু’বার রিঠা মাথায় মাখলে খুশকির সমস্যায় দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।
৮.লেবুঃ দুই টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে অল্প পানি মিশিয়ে দুই থেকে পাচ মিনিট মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। এরপর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সপ্তাহে দুবারের বেশি লেবুর রস ব্যাবহার করা উচিত নয়।
৯.স্কার্ফ বা টুপি ব্যাবহারঃ ধুলোবালি ও দূষন থেকে চুলকে বাচাতে এবং খুশকি দুর করতে বাইরে বের হলে মাথায় স্কার্ফ বা টুপি ব্যাবহার করা যেতে পারে।
১০.খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনঃ দৈনন্দিন খাবারের তালিকা পরিবর্তন এর মাধ্যমে খুশকি দূর করা যায়। যোগ করতে হবে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার।
১১.শ্যাম্পুঃ খুশকি দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খুশকিনাশক শ্যাম্পু পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যাবহার করা যেতে পারে। এছাড়া মেডিকেটেড শ্যাম্পু যেমন- ZPT অর্থাৎ জিংক পাইরিথিওন (Zinc pyrithione) যুক্ত শ্যাম্পু সপ্তাহে একদিন করে একমাস ব্যবহার করুন। উপকার না হলে ১ বা ২ ভাগ কিটোকোনাজলযুক্ত (Ketoconazole) শ্যাম্পু আগের নিয়মে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এ ধরনের শ্যাম্পু ব্যাবহার করার পুর্বে অবশ্যই  চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 

শেষ কথা

খুশকি মানুষের এক বিব্রতকর এবং অত্যন্ত ক্ষতি কর এক সমস্যার নাম। তবে এর সমাধান তেমন কঠিন নয় । আজকের আর্টিকেলে আশা করা যায় খুশকির কারন এবং দূর করার উপায় আমরা জানতে  পেরেছি। আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত সমাধানগুলো অনুসরণ করলে আশা করি আমরা খুশকি থেকে মুক্ত থাকতে পারব। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪