আখরোট এক প্রকার বাদাম যা দেখতে অনেকটা আমাদেরমস্তিষ্ক বা মগজেরমতো। ইংরেজিতে একে Walnut বলা হয় । আখরোট এর বৈজ্ঞানিক নাম Juglans regia. এই বৈজ্ঞানিক নামের গণ (genus) অংশের লাতিন নাম Juglans শব্দটি এসেছে Jovis glans শব্দ হতে যার অর্থ "জিউসের বাদাম"। ্মূলত এই নাম দিয়ে আখরোটকে দেবতাদের খাবার বলে
রূপায়িত করা হয়েছে যা এর পুষ্টিগুন এবং উপকারিতাকে নির্দেশ করে।
এর ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ভাংলে বা
কেটে ফেললে ভেতরের শক্ত খোলস যুক্ত বীজ বা আখরোট দেখা যায়। আজকের ব্লগে
বা আর্টিকেলে চলুন আমরা জেনে নেই আখরোট খাবার নিয়ম এবং উপকারিতা।
আখরোট খাবার নিয়ম
আখরোট খাবার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে, যে নিয়ম অনুযায়ি খেলে আখরোটের
সর্ব্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
আখরোট গুঁড়ো করে বা টুকরো করে অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে মিক্সড
ড্রাই ফুড বা মিক্সড নাটস হিসেবে খেতে পারেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে আখরোট খেলে বেশি উপকারিতা
পাওয়া যায়। এজন্য রাতে ২ থেকে ৪ টি আখরোট ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।
সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে আখরোট খেলে বেশি উপকারিতা মেলে।
বিনা তেলে কড়াইয়ে নেড়ে অর্থাৎ ড্রাই রোস্ট করে নিয়ে সন্ধ্যেবেলার বা
সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের মাঝের স্নাক্স হিসেবে খেতে পারেন।
দুধ অথবা মধুর সাথে খেলেও আখরোটের উপকারিতা বহুগুনে বৃদ্ধি
পায়।
আখরোট খাবার উপকারিতা
আখরোট অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। প্রতি একশ গ্রাম আখরোটে প্রায়
পনেরো গ্রাম আমিষ, পয়ষট্টি গ্রাম ফ্যাট এবং ছয় গ্রাম আশ থাকে। এর
প্রোটিনের মধ্যে অনেকগুলো অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। আখরোটের এতসব উপকারি খাদ্যগুন থাকায় এটিকে "সুপারফুড" বলা হয়ে
থাকে।
এছাড়াও আখরোট খাবার উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় আখরোট আখরোটে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্ককের ক্রিয়াকলাপ(
Function) কে উন্নত করতে পারে। জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষনা মোতাবেক, "আখরোট একই সঙ্গে হৃদযন্ত্র
এবং মস্তিষ্ক উভয়েরই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।"
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী আখরোট
প্রতিদিন আখরোট খাওয়া গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী। আখরোটে আছে ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স (যেমন ফোলেট, রিবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন)। আখরোটে আছে ফলিক
অ্যাসিড, যা গর্ভবতী নারী এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের পক্ষে অতি প্রয়োজনীয়।
হার্ট ভালো রাখে আখরোট:
হার্ট সুস্থ রাখতে আখরোট বিশেষ ভূমিকা পালন করে । ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির উচ্চ মাত্রার কারণে আখরোট কার্ডিওভাসকুলার
সিস্টেমের জন্য খুব উপকারী। এতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ওমেগা 3
ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে হার্টকে সুস্থ
রাখে । ফলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে যায় আর হার্ট সুস্থ এবং ভালো
থাকে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, নিয়মিত আখরোট খেলে তা ক্যানসার
, হার্টের অসুখ, স্নায়ুগত সমস্যা, রক্তচাপ সহ নানা রোগের ওষুধ হিসেবে
কাজ করে।
ক্যান্সারের প্রতিরোধে আখরোট
মরণঘাতি রোগ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে
আখরোট। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিফেনলস এবং
ইউরোলিথিন অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। তাই স্তন, কোলন এবং
প্রোস্টেট এর ক্যান্সার রোধে বড় ভূমিকা রাখে আখরোট।
American Association for Cancer Research
এর
গবেষণায় দেখা গেছে, আখরোট খেলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে।
হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করতে আখরোট
আখরোট হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করে। ভেজানো আখরোটে এমন অনেক উপাদান
পাওয়া যায় যা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে
পারে। আখরোটে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড থাকে যা হাড়কে শক্তিশালী করতে
সহায়তা করতে পারে।
পেট পরিষ্কার করে আখরোটঃ
আখরোট নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় । এতে থাকা ফাইবার পেট
পরিষ্কারে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে আখরোট
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে আখরোট বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা
ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য ভীষণ
উপকারি। ত্বকের বলিরেখা কমাতে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে আখরোট সাহায্য
করে।
অনিদ্রা দূর করে আখরোট:
আখরোটে মেলাটোনিন নামক এক প্রকার উপাদান থাকে । এই মেলাটোনিন ঘুমের
পক্ষে বিশেষ সহায়ক । কারণ শরীরে মেলাটোনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঘুম
ভালো হয়। যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত আখরোট খেলে এর হাত থেকে
রক্ষা পাবে।আখরোট বিপাকক্রিয়া উন্নত করে ভালো ঘুমে সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে
এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আখরোট খেলে ভালো ঘুম হয়।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় :
আখরোটে থাকে বায়োটিন বা ভিটামিন বি-৭ এবং ফ্যাটি এসিড যা চুলকে
শক্তিশালী করে । এই উপাদানগুলি চুলের ফলিকল গুলিকে শক্তিশালী করে চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে আখরোটের তেল মাখলে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
এটি চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যও ভালো
থাকে।
আখরোট মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে । পুষ্টিবিদদের মতে,
আখরোট কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা কমায় । এই হরমোন মানসিক চাপের সঙ্গে
সম্পর্ক যুক্ত । এছাড়া আখরোটে থাকা ‘পলিঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট ‘
দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় রক্তচাপ কমায় ।
ডায়াবেটিসের জন্য আখরোট :
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন আখরোট খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাক।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
শেষ কথা-আখরোট খাবার নিয়ম । আখরোট খাবার উপকারিতা
আখরোট খাবার নিয়ম এবং আখরোট খাবার উপকারিতা নিয়ে ছিলো আমাদের আজকের এই
পোস্ট। আশা করি পুরো পোস্টটি আপনারা পড়েছেন এবং আপনাদের ভালো
লেগেছে। আখরোটখাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো
লেগে থাকে, তাহলে আপনার ফেসবুক ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করতে
পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url