উচ্চ রক্তচাপ । লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

পরিচিতিঃ উচ্চ রক্তচাপ

 বর্তমানে আধুনিক জীবনে যেসকল রোগ খুব বেশি আলোচিত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ ।  উচ্চ রক্তচাপ ইংরেজিতে Hypertension বা High Blood Pressure নামে পরিচিত। তবে অনেক ব্যাক্তি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যাক্তি জানেনই না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপ এ ভুগছেন।  
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন।আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো উচ্চ রক্তচাপ এর লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে। আজকের এই ব্লগ পুরোটা পড়লে আশা করি আমরা এই উচ্চ রক্তচাপ নামক ব্যাধি থেকে সুস্থ থাকতে পারব। প্রথমেই আমরা জেনে নেই উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে

উচ্চ রক্তচাপ কি

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হচ্ছে ১২০/৮০। যদি কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর বেশি হয় এবং সেটি ২ মাস বা তার বেশি সময় স্থায়ী হয় , তবে সেই ব্যাক্তি উচ্চ রক্তচাপে (Hypertension or High blood pressure) ভুগছেন বলে ধরে নেয়া যেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ এর লক্ষণ

সাধারণত নিচের লক্ষণ গুলি উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে দেখা যায়ঃ

  • মাথা ব্যাথা বিশেষ করে মাথার পেছনে ব্যাথা
  • মাথা ঘোরা
  • ঘাড় ব্যাথা
  • চোখের পেছনে ব্যাথা
  • বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • অল্পতেই উত্তেজিত হওয়া বা রেগে যাওয়া
  • ঘুমের সমস্যা
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • কানে শব্দ হওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • অল্পতেই ক্লান্তি বোধ করা
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা দ্রুত হৃদস্পন্দন
  • বুক ধরফর করা
  • বুকে চাপ বোধ এবং ব্যাথা অনুভব
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • শ্বাসকষ্ট
  • গোড়ালি ও পা ফুলে যাওয়া
  • অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে খিচুনি

উচ্চ রক্তচাপ এর কারণ

সাধারণত নিম্নলিখিত কারনে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকেঃ

  ১. অতিরিক্ত লবণঃ খাবারে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্য যাতে অধিক লবণ থাকে সে ধরনের খাবার গ্রহণ এর ফলে উচ রক্তচাপ হতে পারে। সাধারনত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক লবণ গ্রহনের পরিমান ৬ গ্রাম; এর বেশি লবণ গ্রহণ করা হলে তা রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  ২. ঘুমের স্বল্পতাঃ সাধারণত সুস্থ মানুষের দৈনিক ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন । এর কম ঘুমালে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 ৩.চিনি গ্রহণঃ বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, একজন পুরুষ দৈনিক সর্বোচ্চ ৩৬ গ্রাম এবং একজন মহিলা দৈনিক সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম চিনি খেতে পারেন, এর বেশি গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
৪.ভুল খাদ্য তালিকাঃ খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সব্জি এবং ফলমূল না থাকা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ।
৫.শারীরিক পরিশ্রম না করাঃ সুস্থ থাকতে একজন মানুষের প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট শারীরিক     পরিশ্রম করা উচিত। যথেষ্ট পরিমান শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুকি বেড়ে যায়।
৬. অধিক ওজনঃ অধিকাংশ গবেষনায় এটা প্রমাণিত যে , অধিক ওজনের বা স্থুলতায় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের 
 উচ্চ রক্তচাপ হবার সম্ভাবনা বেশি।
৭. বয়সঃ সাধারনত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তনালীসমূহের নমনীয়তা কমে যায়, ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।  ফলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৮. ডায়াবেটিসঃ  ডায়াবেটিস বিভিন্ন রোগের জননি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না থাকলে উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
৯. বংশগতিঃ বংশগতি বা জিনগত কারণ উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। কারো বংশে মা-বাবা অন্যান্য আত্মিয় স্বজনের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল।
১০. কিডনি সমস্যাঃ কিডনি যদি কোন সমস্যার কারনে সঠিকভাবে কাজ না করে তবে রক্তে দূষিত পদার্থের পরিমান বাড়তে থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম একটি কারন।
১১. টিনজাত, হিমায়িত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার: দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করার জন্য এ ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমানে লবণ ও অন্যান্ন্য রাসায়নিক যুক্ত করা হয়। ফলে এ ধরনের খাবার গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুকি বাড়ে।
১২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার: স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার  উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রচুর তেলে ভাজা জিনিস বা মাংসে ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে যা উচচ রক্তচাপ এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়
১৩. ভাজা-পোড়া খাবার: ভাজা পোড়া খাবারে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং লবণ থাকে, যে দুটিই আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এড়ানো উচিত।
১৪. দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার: বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন ঘি-মাখন-পনির ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করেন।
১৫. ফাস্টফুড: ফাস্টফুড রেস্তোরাঁগুলিতে পরিবেশিত মুখরোচক  খাবারগুলি ব্যাপকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং হিমায়িত করা হয়, তারপরে  উচ্চ চর্বিযুক্ত তেলে  ভাজা বা রান্না করা  হয়। এমনকি এ খাবারগুলোতে প্রচুর লবণ যোগ করা হয়। ফলে অধিক পরিমাণে ফাস্টফুড গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ এর আশংকা বেড়ে যেতে পারে।
১৬. ক্যাফেইন:  চা, কফি, এনার্জি ড্রিংকস, কোমল পানীয় এবং সোডা ইত্যাদি‌ সবগুলোতেই ক্যাফেইন এবং প্রচুর চিনি থাকে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
১৭. তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বা ধূমপান এবং মদ্যপানঃ  তামাকজাত দ্রব্য এবং মদজাতিয় পানিয় তাতক্ষণিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে।

উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যায় সাধারনত চিকিৎসক রোগীর বয়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যালোচনা করে যথাযথ ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। কখনোই নিজে থেকে ওষুধের ধরন বা মাত্রা কমানো-বাড়ানো বা বন্ধ করা উচিত নয়।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হলো :

  • লিসিনোপ্রিল 
  • বিভিন্ন ধরণের ডাই-ইউরেটিক 
  • এ-সি-ই ইনহিবিটর 
  • বিটা ব্লকার 
  • আলফা ব্লকার 
বাজারে এই ওষুধগুলি বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে পাওয়া যায়, যা কেবল্মাত্র ডাক্তারের পরামর্শক্রমে সেবনীয়। এছাড়া  চিকিৎসক খ্যাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়াম ইত্যাদির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করে থাকেন।

শেষ কথা - উচ্চ রক্তচাপ । লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এ ছাড়াও সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সহজেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪