ট্রেজারি চালান কি। ট্রেজারি চালান কিভাবে করতে হয়

যারা নিয়মিত সরকারি লেনদেন করে থাকেন, তারা ট্রেজারি চালান শব্দটির সাথে বহুল পরিচিত। সাধারন ভাবে চালান বলতে কোন প্রতিষ্ঠান হতে পণ্য সরবরাহের সময় দেয়া তালিকাকে বোঝায়। তবে ট্রেজারি চালান জিনিসটা একটু ভিন্ন। সাধারণত সরকারি বিভিন্ন পাওনা বা ফি পরিশোধের জন্য ট্রেজারি চালান ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। 

ট্রেজারি চালান এর ফরম কিভাবে পূরন করতে হয় এবং কোথায় আর কিভাবেই বা জমা দিতে হয় তা না জানার ফলে অনেকেই হয়রানি এবং ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। এই পরিস্থিতি থেকে বাচতে  আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হচ্ছে ট্রেজারি চালান। আজকের এই আর্টিকেল পুরোটা পড়লে আমরা জানতে পারবো ট্রেজারি চালান কি এবং কিভাবে এটি করতে হয়। তাই ট্রেজারি চালান কি এবং কিভাবে এটি করতে হয় জানতে আর্টিকেলটি মনযোগ  সহকারে পুরোটা পড়ুন।

ট্রেজারি চালান কিঃ

ট্রেজারি চালান এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে সরাসরি সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফি, রাজস্ব, আয়কর, জরিমানা সহ সরকারি বিভিন্ন পাওনা বা ফি ইত্যাদির অর্থ ট্রেজারি চালান এর মাধ্যমে সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া যায়। সরকারি পাওনাদি পরিশোধের অন্যতম সহজ উপায় বা পদ্ধতি হচ্ছে ট্রেজারি চালান। সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে ট্রেজারি চালান করা যায়। 

ট্রেজারি চালান কিভাবে করতে হয়ঃ

সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে ট্রেজারি চালান করা যায়।  এই দুই ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন ব্যাংকে ট্রেজারি চালান করা যায় না। তবে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণত সবচেয়ে বেশি ট্রেজারি চালান হয়ে থাকে, কারণ এই ব্যাংকের শাখা দেশে সবচেয়ে বেশি। 
ট্রেজারি চালান ফরম সংগ্রহঃ
 ট্রেজারি চালান করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন ট্রেজারি চালান ফরম। ট্রেজারি চালান ফরম ইন্টারনেটে সহজলভ্য। এছাড়াও যে ব্যাংকে ট্রেজারি চালান  করবেন সেখানেও এই ফরম পাওয়া যায়। তাছাড়া বেশিরভাগ কম্পিউটার কম্পোজ এর দোকান বা ফটোকপির দোকানে ট্রেজারি চালান ফরম পাওয়া যায়। 
প্রয়োজনে এই লিংকে গিয়ে ট্রেজারি চালান ফরম ডাউনলোড করা যায়। ট্রেজারি চালান ফরম তিন পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। প্রতিটি ট্রেজারি চালান এর জন্য আলদা আলাদাভাবে এই তিন পৃষ্ঠার ট্রেজারি চালান  ফরম প্রয়োজন।
ট্রেজারি চালান ফরম পূরনঃ

ট্রেজারি চালান ফরম সংগ্রহ করা হলে তা নির্ভুল ভাবে পূরন করতে হবে। তার জন্য এই প্যারাগ্রাফ বা অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধাপগুলি অনুসরন করতে হবে। এই অংশে পুরো ট্রেজারি চালান ফরম এর বিভিন্ন অংশের বর্ণনা এবং কিভাবে তা পূরণ করা হবে তা বলা হয়েছে।

  • বর্তমান আর্টিকেলে সংযুক্ত ছবির দিকে যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাব যেট্রেজারি চালান ফরম এর সবার উপরে ডান কোনে ১ম(মূল) কপি, ২য় কপি এবং ৩য় কপি লিখা ৩টি ঘর আছে। সবার আগে তিনটি ফরমের এই ঘরগুলিতে যথাক্রমে উপরের ফরমে ১ম(মূল) কপির ঘরে টিক চিহ্ন, এবং অন্যগুলিতে ২য় এবং ৩য় ঘরে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
  • চালান নংঃ ট্রেজারি চালান ফরম  এর ঠিক নিচেই রয়েছে "চালান নং" নামক ঘর। এই ঘরটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুরন করবেন।
  • তারিখঃ ট্রেজারি চালান ফরম  "চালান নং" নামক ঘর এর ঠিক পাশেই রয়েছে তারিখ এর ঘর, এই ঘরে যেদিন ট্রেজারি চালান করবেন সেই দিনের তারিখ বসাতে হবে।
  • ব্যাংকের নামঃ ট্রেজারি চালান ফরম এর পরের ঘরে যে ব্যাংকের নামের উপর টিক চিহ্ন দিতে হবে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক নাকি সোনালি ব্যাংক তা নির্দেশ করতে হবে। তার পাশে ব্যাংকটি যে জেলায় অবস্থিত সে জেলার নাম এবং সংশ্লিষ্ট শাখার নাম উল্লেখ করতে হবে।
  • কোডঃ ট্রেজারি চালান ফরম এর পরের ঘরটি সর্ব্বোচ্চ গুরুত্বপুর্ণ এটি হচ্ছে ট্রেজারি চালান এর কোডের ঘর।  এটি একটি ১৩ অংকের সংখ্যা বা কোড ,যা নির্দেশ করে সরকারে্র কোন বিভাগে এই ট্রেজারি চালান এর টাকা জমা করা হচ্ছে এটি ট্রেজারি চালান কোড নামে পরিচিত। এই ঘরে কোন ভুল করা চলবে না। কারন ভুল ট্রেজারি চালান কোড ব্যাবহার করে ভুল জায়গায়  টাকা জমা হলে সেই টাকা ফেরত পাবার কোন উপায় নেই। এই ট্রেজারি চালান কোড টাকা গ্রহণকারি সংশ্লিষ্ট  বিভাগ থেকে বা প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি হতে জেনে নিতে হবে এবং ট্রেজারি চালান ফরম নির্ভুল ভাবে পূরন করতে হবে। 

বক্স বা ছক আকৃতির ঘরঃ

ট্রেজারি চালান ফরম এ কোড এর নিচে কিছু বক্স বা ছক আকৃতির ঘর আছে। বাম দিক হতে ট্রেজারি চালান ফরম এর এই ঘরগুলির নাম এবং পুরন করার পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
  1. যাহার মারফত প্রদত্ত হইল তার নাম ও ঠিকানাঃ আপনি নিজে স্বশরীরে যদি ট্রেজারি চালান জমা দিতে ব্যাংকে যান তবে এই ঘরে লিখবেন "নিজ" সাথে মোবাইল নং। আর যদি অন্য কেউ আপনার পক্ষে ট্রেজারি চালান জমা করতে যায় তবে সেই ব্যাক্তির নাম সহ পূর্নাংগ নাম ঠিকানা এবং মোবাইল নং এই ঘরে দিতে হবে।
  2. যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে টাকা প্রদত্ত হইল তাহার নাম, পদবী ও ঠিকানাঃ এই অংশের নিচের খালি ঘরে আপনার নিজের নাম বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় ইত্যাদি দিতে হবে। কিভাবে লিখবেন তার সহজ একটি নমুনা নিচে দেওয়া হল । নমুনাটি অনুসরণ করে সঠিক তথ্য দ্বারা ফাঁকা ঘরটি পূরণ করতে হবে।

    নাম :
    পদবী (যদি থাকে) :
    ঠিকানা :
    বাড়ি নং :               মহল্লা :
    ডাকঘর :               জেলা :
    মোবাইল নম্বর :

  3. কি বাবদ জমা দেওয়া হইল তাহার বিবরণঃ এই ঘরে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে কি জন্য আপনি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে চাচ্ছেন বা আপনার টাকা জমা দানের উদ্দেশ্য। উদাহরণ স্বরুপ, আপনি যদি নিয়োগ পরীক্ষার ফি বাবদ টাকা জমা দিতে চান, তাহলে এই ঘরে লিখবেন," নিয়োগ পরীক্ষার ফি বাবদ"। 

  4. মুদ্রা ও নোটের বিবরণ/ড্রাফট,পে-অর্ডার ও চেকের বিবরণঃ এখানে আপনি কি মুদ্রা ব্যাবহার করে ট্রেজারি চালান করতে চাচ্ছেন তা উল্লেখ করতে হবে। যদি সরাসরি বাংলাদেশি টাকা ব্যাবহার করে ট্রেজারি চালান জমা দেন তাহলে লিখুন "নগদ"। আর যদি ভিন্ন কোন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাবহার করে থাকেন তবে উল্লেখ করুন নগদ এবং মুদ্রার নাম। যদি নগদ মুদ্রা ব্যাতিত অন্য কোন মাধ্যম যেমন, চেক,ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার ব্যাবহার করে ট্রেজারি চালান করে থাকেন তবে তার বিস্তারিত বিবরণ যেমন চেক বা ড্রাফট নং, ইস্যুকারি ব্যাংকের নাম, জেলা ও শাখার নাম, তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করুন।

  5.  টাকার অংকঃ ৫ নং ঘরটি হচ্ছে টাকার অংকের ঘর।  ট্রেজারি চালান এর এই ঘরে আপনি যত টাকার ট্রেজারি চালান করেছেন তার পরিমান সংখ্যায় লিখে উল্লেখ করুন। এই ঘরের ঠিক নিচে পাবেন মোট টাকার ঘর। ট্রেজারি চালান এ একাধিক কারনে টাকা জমা হলে বা একাধিক চেক বা ড্রাফট ব্যাবহার হলে সবগুলির মোট টাকার পরিমাণ বা সমষ্টি এই ঘরে দিন।

  6. বিভাগের নাম এবং চালানের পৃষ্ঠাংকনকারী কর্মকর্তার নাম, পদবী ও দপ্তরঃ এই ঘরে আপনাকে লিখতে হবে  আপনি যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির নামে বা বরাবরে ট্রেজারি চালান ফরমে টাকা জমা দিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির নাম, এর পর পদবী (যদি থাকে) ,তারপর উক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সম্পূর্ণ ঠিকানা। যদি আপনি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য ট্রেজারি চালান জমা দিতে ইচ্ছুক হোন তাহলে বিজ্ঞপ্তিটি ভালো ভাবে দেখুন সেখানেই উল্লেখ করা রয়েছে কিভাবে আপনি এই অংশ পূরণ করবেন বা এই অংশে কি লিখবেন।

  7. টাকা (কথায়)ঃ এই ঘরটিতে আপনি মোট যত টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে ইচ্ছুক সেই টাকার পরিমাণ কথায় লিখতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ, আপনি যদি ১০০ টাকা ট্রেজারি চালান এর মাধ্যমে জমা দেন তাহলে এভাবে লিখবেন, " টাকা একশত মাত্র"। 

  8. তারিখঃ টাকা (কথায়) এই ঘরের নিচে একটি তারিখের ঘর রয়েছে। এখানে ট্রেজারি চালান জমা দেয়ার তারিখ দিতে হবে। 

ট্রেজারি চালান এর উপরোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে শেষ এবং খালি ঘরগুলো সঠিক তথ্য দ্বারা ট্রেজারি চালান ফরম পূরণ করে, সব শেষে কিছু তথ্য পুনরায় মিলিয়ে  দেখা উচিত। এর মধ্যে ট্রেজারি চালান জমা দানের তারিখ, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিবেন,কোন জেলায় ও শাখায় অবস্থিত সেটি দেখতে হবে। খুবই সর্তক ভাবে মিলিয়ে নিবেন ট্রেজারি চালানের কোড নং, এর পর নিম্নের বক্সে থাকা উল্লেখিত বর্ণনামূলক অংশ বিশেষ করে টাকা ও পয়সার অংক।
 ট্রেজারি চালান ফরম জমাঃ
ট্রেজারি চালান ফরম সঠিকভাবে পুরন করা হলে সঠিক পরিমান টাকা সহ ট্রেজারি চালান ফরমটি ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে বা ট্রেজারি চালান জমা নেবার নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিতে হবে। ব্যাংকের দায়িত্ব রত কর্মকর্তা ট্রেজারি চালান ফরম এর তিনটি পৃষ্ঠার মধ্যে নিচের দুটি রেখে দিবেন এবং এক নং পৃষ্ঠা বা মূল কপিতে ট্রেজারি চালান নং ও প্রয়োজনীয় সিল-স্বাক্ষর সহকারে ফেরত দিবেন।এই মূল কপিটি আপনার সংগ্রহে রাখবেন। কোথাও বিশেষ করে কোন নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন এর সাথে মূল কপি জমা দিতে হলে এটির একটা ফটোকপি নিজের কাছে রেখে দিবেন। 

শেষ কথাঃ ট্রেজারি চালান কি। ট্রেজারি চালান কিভাবে করতে হয়

ট্রেজারি চালান আমাদের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। তাই এটি সম্পর্কে জেনে রাখা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে ট্রেজারি চালান কি এবং ট্রেজারি চালান কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কোন কাজে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪