শীতকালে কুয়াশা হয় কেন - কুয়াশা কী
প্রিয় পাঠক আপনি কি শীতকালে কুয়াশা হয় কেন তা জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে কুয়াশা কী, কুয়াশা কিভাবে তৈরি হয় এবং শীতকালে কুয়াশা হয় কেন ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই শীতকালে কুয়াশা হয় কেন জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
নিচে আপনাদের জন্য কুয়াশা কিভাবে তৈরি হয়, কুয়াশার গল্প, কুয়াশা কি এবং শীতকালে কুয়াশা হয় কেন ইত্যাদি বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই শীতকালে কুয়াশা হয় কেন তা জেনে নিতে পারবেন। তাই দেরি না করে শীতকালে কুয়াশা হয় কেন জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালে কুয়াশা হয় কেন - কুয়াশা কী
কুয়াশা কী
ভূমির সংস্পর্শে থাকা মেঘালাকে বলা হয় কুয়াশা। আংশিকভাবে মেঘকেও কুয়াশা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। মেঘের যে অংশ ভূমির উপরে অর্থাৎ বাতাসে ভেসে থাকে তাকে কুয়াশা বলা যায়না বা বিবেচনা করা যায় না। তবে ভুমির উঁচু অংশের সংস্পর্শে লেগে থাকা মেঘকে কুয়াশা বলা যায়। আশা করি কুয়াশা কি জানতে পেরেছেন।
কুয়াশা কিভাবে তৈরি হয়
কুয়াশা কিভাবে তৈরি হয় - কুয়াশা তৈরি হয় যখন বাতাসের আর্দ্রতা পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছে ক্ষুদ্র জলের ফোঁটায় ঘনীভূত হয় এবং একটি মেঘ তৈরি করে। এটি ঘটে যখন আর্দ্র বায়ু ঠান্ডা হয় এবং তার স্যাচুরেশন পয়েন্টে পৌঁছায়, যার ফলে জলীয় বাষ্প ছোট ছোট ফোঁটাগুলিতে ঘনীভূত হয় যা বাতাসে স্থগিত থাকে। কুয়াশা সাধারণত তৈরি হয় যখন উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু দ্রুত শীতল হয় কারণ এটি জমি বা জলের মতো শীতল পৃষ্ঠের উপর দিয়ে চলে যায়।
এটি তখনও তৈরি হতে পারে যখন শীতল, আর্দ্র বায়ু একটি উপত্যকার মতো নিচু এলাকায় আটকে থাকে এবং উপরের শুষ্ক বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে না। কুয়াশা গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক শর্তগুলি অন্যদের মধ্যে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বাতাসের গতির মতো কারণগুলির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
কুয়াশা গল্প
শীতকালে আমরা দেখতে পাই যে সকাল থেকে খুব ঘন কুয়াশা পড়ে। কোন কোন দিন আবার সকাল বিকাল রাত সব সময় কুয়াশা পড়তে থাকে। এমন সময় নিয়ে অনেকের মনে অনেক ধরনের গল্প জাগ্রত হয়। বাংলাদেশে একটি অনলাইন পত্রিকা রয়েছে "মাসিক কুয়াশা" নামে। এরকম একটা কুয়াশা গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের এই কুয়াশা গল্পটি odhikar.news থেকে সংগৃহীত এবং লিখেছেন তানজিদ শুভ্র।
"কুয়াশা গল্প"
কয়দিন যাবৎ খুব শিশির পড়ছে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীত আমাদের নাগালে, হেমন্ত শেষ হতে চলছে। ঠিক এই সময়টায় খুব বেশি মনে পড়ে ওকে। ও ছিল আমার খেলার সাথী। নাহিয়ান আবির (কুয়াশা) নামের আমার এই বন্ধুটি ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে খুব ভালোবাসত। আমিই তো ছিলাম ওর হাঁটার সঙ্গী। একসাথে হাঁটতাম কত স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতাম! দুজন মিলে একটা স্বপ্ন দেখতাম। হয়ত ছোট ছোট অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নও করেছি। চেয়েছি অনেক কিছু করতে।
আরো পড়ুনঃ কোমরের ব্যথা - কোমরের একপাশে ব্যথা
আমাদের দুজনের প্রিয় সময় শীতকাল। ভোর বেলা যখন পিচঢালা রাস্তা ছেড়ে হেঁটে হেঁটে চলে যেতাম লাল মাটির কাঁচা রাস্তায় আর খুব করে গাছিদের কাছ থেকে খেজুরের কাঁচা রস আর মুড়ি খেয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতাম তার চেয়ে ভালো লাগা হয়ত আর নেই। সবার ভালো লাগা কি আর সব সময় টিকে থাকে?
মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য আমি চলে আসলাম বিভাগীয় শহরে। বিচ্ছিন্ন হল আমার আর কুয়াশার নিয়মিত পথচলা। সপ্তাহ শেষে বাড়ি পৌঁছাতে পারলে আমার প্রথম গন্তব্য হয় কুয়াশার বাড়ি। সপ্তাহ শেষে আমাদের কথা বলার বিষয় হয় সারা সপ্তাহের বিশেষ ঘটনা আর আমাদের স্বপ্ন। কী যে হয়ে গেল হঠাৎ খুব দুঃখের সংবাদ এলো বাড়ি থেকে। তখন আমার পরীক্ষা চলছিল। আম্মু ফোন করে জানাল কুয়াশার বাবা আর নেই। কুয়াশা স্বচ্ছল পরিবারের বড় ছেলে। বাবা হারিয়ে বন্ধু আমার খুব নিশ্চুপ হয়ে গেছে নাকি। এই সময়ে পাশে থাকতেও পারি নি আমি।
পরের সপ্তাহে বাড়ি যাওয়ার আগে গেলাম কুয়াশার বাড়িতে। কুয়াশা জানালার পাশে বসে বিছানার এক কোণে নিশ্চুপ হয়ে দূরে তাকিয়ে আছে। আমি বিরক্ত না করে আস্তে করে কাঁধের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ওর পাশে বসে হাতটা ধরলাম। কুয়াশা আমাকে দেখে কিছু বলতে পারল না, জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদছিল। আমি মোটেও সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেলাম না আমি। আমি নিজেও কেঁদে ফেলেছিলাম ঐদিন।
সংসারের হাল ধরতে হয় কুয়াশার। কলেজ জীবনের ইতি ঘটে ঐদিনই। বড় বোন জামাই সংসারের খরচা দিলেও কুয়াশা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কাজের সন্ধানে। এদিকে কুয়াশার জীবনে সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত এক কথার তাৎপর্য নেমে আসল। সত্যিই প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসল কুয়াশার জীবনে। কষ্ট দিয়ে প্রিয়তমা চলে গেল এই দুঃসময়য়ে।
সব বিষণ্ণতায় জীবন স্তব্ধ হয়ে থাকতে পারে না। জীবনকে চালিয়ে নিতে হয়। জীবন চালানোর পথে হতাশার পর হতাশায় আক্রান্ত হয়ে আস্তে আস্তে ধূমপান থেকে বড় নেশায় ডুবে যায় কুয়াশা। আমি বাড়ি গিয়ে দেখা করতে চাইলেও আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয় নি কুয়াশা। দূর থেকে দেখে আমি শুধু অবাকই হই। জড়িয়ে নিতে পারি না বুকে। কী আর করার ছিল! কুয়াশার জীবনের এই ধূমায়িত কুহেলী কবে দূর হবে তা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। হয়ত ওর জীবনে আবার কোন দিন মাঘের সন্ন্যাসী কেটে গিয়ে বইবে বসন্তের বাতাস।
শীতের কুয়াশা
শীতকালের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হচ্ছে শীতের কুয়াশা পড়া। শীতের সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাই যে শীতের কুয়াশা পড়া আরম্ভ হয়ে গেছে। এই শীতের কুয়াশা কখনো কখনো সারাদিন পড়ে। শীতের কুয়াশা যখন পড়তে থাকে তখন রাস্তাঘাট স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় না। এই শীতের কুয়াশা অনেকে আনন্দের সাথে অনুভব করে থাকে। আবার এই শীতের কুয়াশা অনেকের স্মৃতি জাগ্রত করে।
শীতকালে কুয়াশা হয় কেন
শীতকালে কুয়াশা হয় কেন - শীতকালে কুয়াশা হয় কেন তা অনেকেরই জানার খুব আগ্রহ হয়ে থাকে। শীতকালে কুয়াশা বেশি দেখা যায় কারণ এই ঋতুতে বাতাসের তাপমাত্রা কমে যায়, যা বাতাসে আর্দ্রতা ঘনীভূত হওয়ার এবং কুয়াশা তৈরির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। শীতকালে, নদী এবং হ্রদের মতো স্থল এবং জলের দেহগুলি বাতাসের চেয়ে বেশি দ্রুত তাপ হারায়, যার ফলে তাদের সংস্পর্শে থাকা বাতাস শীতল হয়ে যায় এবং শিশির বিন্দুতে পৌঁছায়। যখন এটি ঘটে, বাতাসের আর্দ্রতা ছোট জলের ফোঁটায় ঘনীভূত হয়, কুয়াশা তৈরি করে।
উপরন্তু, শীতকালীন আবহাওয়ার নিদর্শনগুলি এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে যা কুয়াশা গঠনের পক্ষে। উদাহরণস্বরূপ, ঠান্ডা বাতাসের ভরগুলি উষ্ণ বাতাসের একটি স্তরের নীচে আটকে যেতে পারে, একটি তাপমাত্রার বিপরীত সৃষ্টি করে যা আর্দ্র বায়ুকে বৃদ্ধি এবং বিলুপ্ত হতে বাধা দেয়। এর ফলে নিম্ন বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা তৈরি হতে পারে, যা কুয়াশার সৃষ্টি করতে পারে।
অবশেষে, আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে শীতকালে কুয়াশাও বেশি হতে পারে। অনেক অঞ্চলে, শীতের আবহাওয়া বাতাসে উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা কুয়াশা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আশা করি শীতকালে কুয়াশা হয় কেন তা জানতে পেরেছেন।
কুয়াশা ও শিশিরের মধ্যে পার্থক্য
কুয়াশা এবং শিশির দুটি একই রকম মনে হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। কুয়াশা এবং শিশির উভয়ই বাতাসে আর্দ্রতার উপস্থিতির সাথে সম্পর্কিত, তবে তারা তাদের গঠন এবং চেহারাতে আলাদা। চলুন কুয়াশা ও শিশিরের মধ্যে পার্থক্য জেনে নিন।
কুয়াশা ও শিশিরের মধ্যে পার্থক্য - কুয়াশা হল একটি মেঘ যা মাটির স্তরে বা তার কাছাকাছি তৈরি হয় যখন আর্দ্র বায়ু ঠান্ডা হয় এবং তার স্যাচুরেশন পয়েন্টে পৌঁছায়, যার ফলে জলের ফোঁটা তৈরি হয় এবং বাতাসে স্থগিত থাকে। কুয়াশা প্রায়ই ঘন হয় এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমানতা হ্রাস করতে পারে, এটি দেখতে কঠিন করে তোলে।
অন্যদিকে, শিশির হল আর্দ্রতার একটি পাতলা স্তর যা ঘাস, পাতা এবং গাড়ির উইন্ডশীল্ডের মতো পৃষ্ঠের উপর তৈরি হয়, যখন তারা ঠান্ডা হয় এবং বাতাসের আর্দ্রতা তাদের উপর ঘনীভূত হয়। শিশির সাধারণত পরিষ্কার, শান্ত রাতে তৈরি হয়, যখন মাটি ঠান্ডা হয় এবং বায়ুমণ্ডলে তাপ বিকিরণ করে, যার ফলে মাটির কাছাকাছি বাতাস শীতল হয় এবং তার শিশির বিন্দুতে পৌঁছায়।
সুতরাং, কুয়াশা হল একটি মেঘ যা মাটির কাছে তৈরি হয়, যখন শিশির হল আর্দ্রতার একটি স্তর যা পৃষ্ঠের উপর তৈরি হয়। কুয়াশা দৃশ্যমানতা হ্রাস করে এবং কয়েক ঘন্টা বা এমনকি দিন ধরে চলতে পারে, যখন শিশির সাধারণত সকালে চলে যায় এবং দৃশ্যমানতার উপর খুব কম প্রভাব ফেলে।
কুয়াশা কাকে বলে
কুয়াশা কাকে বলে সে সম্পর্কে আমরা উপরের অংশে জেনে এসেছি। তারপরেও চলুন যারা কুয়াশা কাকে বলে জানতে চাচ্ছেন তারা আবার কুয়াশা কাকে বলে জেনে নিন। ভূমির সংস্পর্শে থাকা মেঘালাকে বলা হয় কুয়াশা। আংশিকভাবে মেঘকেও কুয়াশা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। মেঘের যে অংশ ভূমির উপরে অর্থাৎ বাতাসে ভেসে থাকে তাকে কুয়াশা বলা যায়না বা বিবেচনা করা যায় না। তবে ভুমির উঁচু অংশের সংস্পর্শে লেগে থাকা মেঘকে কুয়াশা বলা যায়।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং শীতকালে কুয়াশা হয় কেন তা জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটিতে শীতকালে কুয়াশা হয় কেন ছাড়াও আরো জানতে পেরেছেন যেমন শীতের কুয়াশা, কুয়াশা কাকে বলে, কুয়াশা ও শিশিরের মধ্যে পার্থক্য কি ইত্যাদি বিষয়গুলো।আশা করি এ সকল তথ্যগুলো আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেশি বেশি জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url