মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম

মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম করার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। যেহেতু কোন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তার আশেপাশের মানুষ আত্মীয়-স্বজন তার জন্য আমল করলে সে আমলগুলো কার্যকরী হবে। সেই জন্য আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে আলোচনা করব। 

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে জানা উচিত। তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম

মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম

কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে অনেক জায়গায় দেখতে পাই মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়ার আগে মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাত কামনা করে পবিত্র কোরআন খতমের পাশাপাশি কালেমা পাঠের খতম দেওয়া হয়। আমরা অনেকেই মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে কোন ধারণা রাখি না। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে এবং মৃত ব্যক্তির ক্ষমার জন্য মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে জানা উচিত।

আরো পড়ুনঃ মনে মনে তালাক দিলে কি তালাক হয়

অনেকেই আছে মানুষ মৃত্যুবরণ করলে ৭০ হাজার বার কালেমা খতম করে থাকে। এমন আমল জায়েজ রয়েছে কিন্তু ৭০ হাজার বার কালেমা খতমের কথা সরাসরি কোরআন হাদিসে কোথাও বলা নেই। কিন্তু আপনি যদি এটিকে জরুরী এবং সুন্নত মনে করেন তাহলে বিদআত হবে। যেহেতু এটি মৃত ব্যক্তির জন্য উপকারি, সেহেতু আমল করা যেতে পারে।

হযরত মাকিল বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন পড়ো।{ ইবনে মাজাহ} কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ, এটা আমরা সকলেই জানি। হাদিসের তথ্য অনুযায়ী এটি একটি উত্তম জিকির। একাধিক হাদিসে এই কালেমা পাঠের বহু ফজিলত বর্নিত আছে।

একটি হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি ইতিহাদের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে"{ মুসনাদে আহমদঃ ১৯৬৮৯} সেজন্য নিজের কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করা অথবা কোন মৃত ব্যক্তির স্বভাবের জন্য পাঠ করা খুবই ভালো কাজ। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যক কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করতে হবে এটার কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম

আমাদের দেশে একটি প্রচলিত কাজ হল কোন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার জন্য কোরআন খতম করা। মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম আমরা প্রতিটি মৃত ব্যক্তির বাড়িতে দেখে থাকি। কিন্তু আপনার জেনে রাখা উচিত যে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম কোন হাদিস ভিত্তিক কাজ নয়। কোন মৃত মানুষের জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃ ও সাহাবীগণ কখনো কোরআন খতম করেননি।

কারো জন্য কোরআন খতম করলে তিনি সব পাবেন এরকম কোন কথা গ্রহণযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয়নি। কোরআন ও হাদিসের মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সন্তান গন মৃত পিতা-মাতার জন্য দান করবে এবং দোয়া করবে এই কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ সিয়াম পালন হজ ও ওমরা পালনের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

কিন্তু মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম, কোরআন তেলাওয়াত, তাজবি তাহলীল পাঠ করা ইবাদতের কোন নির্দেশনা হাদিসে বর্ণিত হয়নি। কিন্তু অনেক আলেম বলে থাকেন যে, যেহেতু দান, সিয়াম, হজ , উমরা ও দোয়ার দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকৃত হবেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে সেও তো আশা করা যায় যে কোরআন তিলাওয়াত তাসবিহ তাহলিল এবং ইবাদত দ্বারা তারা উপকৃত হবেন।

মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয়

কোন মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তার সকলে ইবাদতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম এবং পিতা-মাতার একজন প্রকৃত সন্তান হিসেবে মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয় সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। যেহেতু পিতা-মাতার মাধ্যমেই সন্তানেরা পৃথিবীতে আসার সুযোগ পাই সেহেতু মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয় জেনে নেওয়া যাক।

পিতা মাতার ঋণ ও ওসিয়ত পূরণ করতে হবে - ঋণ পরিশোধ না করা, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদের সব পাপ ক্ষমা করা হলেও ঋণ ক্ষমা করা হয় না। হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করতেন না। ঋণ মানুষের আত্মার প্রশান্তি নষ্ট করে এবং পরকালীন জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। মৃত ব্যাক্তি কোন ওসিয়ত করে রেখে গেলে তা পূরন করতে হবে।

তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে হবে - মাগফিরাত কামনা করা হলো মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মৃত ব্যক্তির স্বজনরা আল্লাহর কাছে, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কামনা করেন। ক্ষমাপ্রার্থনা করার দ্বারা মৃত ব্যক্তিদের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ তাআলা কবরবাসীর কাছে পৃথিবীবাসীর দোয়া কে পাহাড় সমান বড় করে উপস্থাপনা করেন।

আরো পড়ুনঃকোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়

নিয়মিত তাদের জন্য দোয়া করা - যখন কোন পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন একজন সন্তানের উচিত নিয়মিত পিতা মাতার জন্য দোয়া করা। আজীবন তাদেরকে স্মরণে রাখা। যখন সুযোগ হবে তখনই তাদের কথা মনে করা এবং তাদের জন্য আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চাওয়া। মৃত পিতা মাতার জন্য বিশেষ দোয়া মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, "রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগিরা" (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪) অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’

কবর জিয়ারত করতে হবে - মাতা পিতা মৃত্যুবরণ করলে মাঝেমধ্যেই তাদের কবর জিয়ারত করতে হবে, এটি সন্তানের একটি দায়িত্ব এবং কর্তব্য। বিশেষ করে জুমার দিন কবর জিয়ারত সম্পর্কে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তাই একজন সন্তান হিসেবে আমাদের অবশ্যই উচিত হবে যে আমাদের পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করা।

মৃত ব্যক্তির জন্য সূরা ইয়াসিন

আমরা জানি যে সুরা ইয়াসিন এর অনেক ফজিলত রয়েছে। মৃত ব্যক্তির জন্য সূরা ইয়াসিন পাঠ করার বিধান আমাদের অনেকের জানা নেই। যেহেতু সুরা ইয়াসিন একটি খুবই ফজিলত পূর্ণ সূরা সেহেতু আমাদের অবশ্যই মৃত ব্যক্তির জন্য সূরা ইয়াসিন পাঠ করার বিধান সম্পর্কে জানা উচিত।

কোন মুমূর্ষ ব্যাক্তির পাশে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা মুস্তাহাব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেন," তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের নিকট সুরা ইয়াসিন পাঠ কর"{ সুনানে আবু দাউদঃ ৩১২১} হযরত মাকিল বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের উদ্দেশ্যে সুরা ইয়াসিন পড়ো।{ ইবনে মাজাহ}

তবে ফুকাহায়ে কেরামগন বলেন, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার পাশে কোরআন পাঠ করা নিষেধ। তবে গোসল দেওয়ার পর পড়া যেতে পারে। সুতরাং মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার পাশে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা যাবে না।

মৃত ব্যক্তির জন্য ফাতেহা দেওয়ার নিয়ম

মৃত ব্যক্তির জন্য ফাতেহা দেওয়ার নিয়ম আমাদের জানা উচিত। একজন মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম, মৃত ব্যক্তির জন্য ফাতেহা দেওয়ার নিয়ম জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এই আমল গুলো করতে পারি মৃত ব্যক্তির জন্য। যেহেতু মৃত ব্যক্তির আমল করার সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সেহেতু তখন আমাদেরকে তার মাগফিরাত কামনা করতে হবে আল্লাহতালার কাছে।

ফাতেহা পাঠ এর অর্থ বলা যায় সর্বপরিচিত, সূরা ফাতেহা পাঠ করা। তবে পরিভাষায় মৃত ব্যক্তির কবরে উপস্থিত হয়ে তার জন্য সূরা ফাতেহা বা সংক্ষিপ্ত দুআ-প্রার্থনা করা। যেমন, আমরা প্রায়ই খবরে শুনে থাকি, প্রেসিডেন্ট  বা প্রধানমন্ত্রি অমুক নেতার কবরে যেয়ে ফাতেহা পাঠ করেছেন, এটাকে ফাতেহা খানিও বলা হয়।

এ থেকে ফাতেহা ইয়াযদাহম ও ফাতেহা দোয়াযদাহম এর উৎপত্তি। ফাতেহার আরেকটি প্রচলিত রূপ আছে। তাহল কোন অলী বা বুযুর্গের সওয়াব রেসানীর উদ্দেশ্যে খানা পাকানোর পর তাতে দুআ-দরূদ বা সুরা-কালাম পড়ে ফুঁক দেয়া ও তারপর তা বিতরণ করা।

আমাদের শেষ কথাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে মৃত ব্যক্তির জন্য ফাতেহা দেওয়ার নিয়ম, মৃত ব্যক্তির জন্য সূরা ইয়াসিন, মৃত ব্যক্তির জন্য সন্তানের করণীয়, মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম, মৃত ব্যক্তির জন্য কালেমা খতম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে কুয়াশা হয় কেন - কুয়াশা কী

একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন ধন্যবাদ।২০৭৯১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪